স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রাচীর ঘেঁষে বাস যাত্রী, ট্রেনের যাত্রীসহ সাধারণ মানুষরা করছে প্রস্রাব। প্রস্রাবের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ বলে জানিয়েছেন পথচারীরা । সেই সাথে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রোড অর্থাৎ গোদাগাড়ী উপজেলার ভেতর হাইওয়ে রাস্তা, এতটা দুর্গন্ধ সহ্য করতে হবে আশা করেননি। রাজশাহীর বাতাসে উড়ছে দুর্গন্ধ, পরিবেশ নষ্টে দায়ী কারা? এমন প্রশ্ন করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লক্ষীপুরের এক ফার্মেসী মালিক।
এমন কিছু অভিযোগে স্বদেশ বাণীর প্রতিবদকের উপস্থিতিতে গত শুক্রবার, শনিবার, রবিবার (১২ থেকে ১৩ আগস্ট) জেলা ও উপজেলা ঘুরে দেখা যায় রাজশাহীর কিছু অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের চিত্র ।
এই পরিবেশে নিরব ভূমিকা পালন করছেন ভুক্তভোগিরা। তারা জানান, বলে লাভ হয় না। উল্টো ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
অন্যদিকে , অভিযোগ না পেলে কিছু করার নাই বলে জানান স্থানীয় প্রতিনিধিরা। বসে থাকছেন ভুক্তভোগিদের অভিযোগের আশায়। সেই সাথে পথচারীরা দুর্গন্ধে অতিষ্ট, পরিবেশ রক্ষার্থে একাধিক মৌখিক অভিযোগ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছালেও সুনজর পড়েনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
গত শুক্রবার (১২ আগস্ট) সরজমিনে রেলওয়ের স্থানটিতে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গন্ধময় পথটির পাশ দিয়ে ৬ষ্ট শ্রেনিতে পড়ুয়া জান্নাত (ছদ্ম নাম) নাকে মুখে কাপড় চেপে হেটে যাচ্ছেন। জান্নাত শিরোইল এলাকায় থাকেন। প্রতিদিন স্কুলে যেতে দুর্গন্ধময় এই পথটির সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান।
বিস্তারিত জানতে চাইলে বলেন, এটা তো রেলওয়ে স্টেশনের প্রাচীর। সেই সাথে স্টেশনের বাহির গেটে ঢাকামুখী বাস কাউন্টার। নারীরা কখনোই রাস্তাঘাটে প্রস্রাব করে না। এই জায়গাতেই পরুষ যাত্রী ও পথচারিরা ছোট বড় নারী, বাচ্চা কিছু দেখেনা সবার সামনে প্রস্রাব করতে শুরু করে। আমি দুর্গন্ধে বমি ও করি মাঝে মাঝে।
রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ে ফলিত রসায়ন বিভাগে পড়ুয়া সেলিম আল বাচ্চু বলেন, টিউশন মাস্টার হিসেবে বাসায় পড়াই। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন নগরীর একি হাল! এই বিষয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি, রেলওয়ে স্টেশন এবং বাস কাউন্টারের লোকজনদের কি কোন দায়িত্বের কথা মনে আসে না? এই শহরে এত সুশিক্ষিত সচেতন মহল থাকতেও কেনো আইনী ও সুব্যবস্থার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না? অরুচিকর পরিবেশ সৃষ্টিতে কর্তৃপক্ষের বেখেয়ালি দৃষ্টির পরিচয় মিলছে বলে স্থানীরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, গোদাগাড়ী উপজেলার ভেতর হাইওয়ে রাস্তার অর্থাৎ বিজয় নগর থেকে রেলগেট বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ টি জায়গায়, রাস্তার পাশে মলমূত্র, পোল্ট্রি মুরগির মল, জুস কোম্পানী ও তেল কোম্পানি সহ অন্যান্য বর্জ্যপদার্থ ফেলা হচ্ছে স্তূপ আকারে। দূষিত পরিবেশের চিত্র চোখে পড়ে স্বদেশ বাণীর।
গোপালপুর, গোগ্রাম, বিজয়নগর, শাবদিপুরের বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা হয়। বাবু নামের একজন বলেন, রাজশাহী থেকে গত তিন মাস থেকে গাড়ি এসে রাতের আঁধারে রাজশাহীর মলগুলো ফেলে যায়। ধরতে পারা যায় না। তাদের জন্য ৫ থেকে ৬ বিঘা জমি নষ্ট হয়েছে।
গোদাগাড়ীর আমানতপুর থেকে একজন বাসিন্দা বলেন, জুস ফ্যাক্টরির আমের ময়লা ফেলে তাঁদের জমির পাশে। কিন্তু রাস্তার ধারে। দুর্গন্ধ বাতাসে উড়ে। ৩ মাস পর শুকিয়ে যায়। আমরা এগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি। থাকতে অসুবিধা হয়। অনেক ঝামেলা হয়েছে এর আগে এই ময়লা নিয়ে। তাই কথা বলিনা।
অন্যদিকে, এক কৃষক জানায়, বড় বড় কোম্পানির ময়লাগুলো ফেলে যায়। মানুষের মল, পল্ট্রি মুরগীর মল বস্তার পর বস্তা সাজানো আছে রাস্তার পাশে। না হলেও ১৫০ বস্তা হবে। কখন কে নিয়ে যাবে বা কার জিনিস কেউ কথা বলেনা। চেয়্যারমান মেম্বাররা ভোটে জিতলেই হাওয়া। জনগণের মাঝেই তারা থাকেন না।
সোহেল রানা নামের একজন চেয়্যারমান জানান, জনগণের ভোটে আজ তিনি চেয়্যারম্যান। পরিবেশ দূষণের এরকম কোন অভিযোগ বা দৃশ্য চোখে পড়েনি। পড়লে অবশ্যই পদক্ষেপ নেবো। আর বড় বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে কিছু করা যায় না বলে জানান তিনি।
স্ব.বা/ম