উপবৃত্তি জালিয়াতি ও সরকারি পাঠ্যবই বিক্রিসহ নানা অভিযোগে বাগাতিপাড়ায় প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত !

রাজশাহী লীড

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধিঃ নাটোরের বাগাতিপাড়ায় চকমহাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলবর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি জালিয়াতি, সরকারি বই বিক্রিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় প্রধান শিক্ষক দেলবর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর অপর এক সভায় এসব অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের মধ্যে তিনি (ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন) সহ অভিভাবক সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ও ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন ছিলেন। তদন্ত কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটি প্রধান শিক্ষক দেলবর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্ত করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হলো, তিনি বিদ্যালয়ের আয়ের অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে লেন-দেন করেননি। তাছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষে ১০৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিপরিতে ১৫০ সেট সরকারি পাঠ্যবই শিক্ষা অফিস থেকে উত্তোলন করে ৯৮ সেট বিতরণ করেছেন। অতিরিক্ত ৫২ সেট বই মজুদ না রেখে বিক্রি করেছেন। এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রকৃত ছাত্র-ছাত্রী অনুযায়ী ৩০ জনের উপবৃত্তি পাওয়ার কথা থাকলেও জালিয়াতি করে শিক্ষার্থীদের ভূয়া নাম সংযোজন করে ২৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী দেখিয়ে ৭৩ জনের উপবৃত্তি চালু রেখেছেন। অন্যদিকে ম্যানেজিং কমিটি গঠণের লক্ষ্যে ভোটার তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রেও অনিয়মের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এসব কারণে তাকে শোকজ করা হলেও তার জবাব না পেয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর ম্যানেজিং কমিটির সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবর প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক দেলবর রহমান তাঁর দায়িত্বে থাকাকালে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি পাঠ্য বই বিক্রি, ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাপ্য উপবৃত্তি জালিয়াতি, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন কার্যক্রমের অভিভাবক ভোটার তালিকা প্রস্তুতে ব্যাপক অনিয়মসহ বিভিন্ন ধরণের দূর্ণীতি করায় ম্যানেজিং কমিটি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তার স্থলে সহকারী শিক্ষক বুলবুল আহমেদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক দেলবর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। ষড়যন্ত্র করে আমাকে বিভিন্ন অনিয়মে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন একজন কলেজ শিক্ষক হওয়ায় সরকারি বিধিমোতাবেক তিনি সভাপতি থাকতে পারেন না। এনিয়েই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়াও আমাকে কোন প্রকার শোকজও করা হয়নি বা যেসব তারিখে মিটিং দেখানো হয়েছে সেসব তারিখেও কোন মিটিং হয়নি। কমিটির সদস্যদের সাক্ষর জাল করে তারা আমাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহনের মিটিং দেখিয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির মোট ১০ জন সদস্যদের মধ্যে ৮ জন সদস্যই আমার পক্ষে রয়েছে। সোমবার বেলা ২টায় ওই ৮ সদস্য আমাকে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সুচারু রূপে পালনের জন্য রেজ্যুলেশন করে দিয়েছেনথ।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহাদ আলী বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্তের একটি চিঠি তিনি পেয়েছেন। অপরদিকে প্রধান শিক্ষকের পক্ষে ম্যানেজিং কমিটির একটি বৈঠকের কথা তাকে প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *