রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই : সরিয়ে নেয়া হচ্ছে চরবাসীদের

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: বিহার ও উত্তর প্রদেশে প্রচুর বৃষ্টির কারণে ফারাক্কার ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। এতে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

মঙ্গলবার দুপুরে বিপৎসীমা থেকে মাত্র ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীতে এখন প্রচণ্ড স্রোত রয়েছে। সে কারণে ইতোমধ্যে রাজশাহীর চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পদ্মার পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ০৭ মিটার। এর আগে ভোর ৬টায় ছিল ১৮ দশমিক ৪ মিটার। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর সোমবার ভোর ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৯০ মিটার। ২৪ ঘণ্টার মধ‌্যে পানি বেড়েছে ১৪ সেন্টিমিটার। আর ২৭ ঘণ্টায় বেড়েছে ১৫ সেন্টিমিটার।

ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেয়ায় রাজশাহীতে এ বছর পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের আশঙ্কা করছেন পাউবো কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র রাজশাহীর কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী পদ্মার পাড়ে পানি পর্যবেক্ষণ করছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর টি গ্রোয়েনে গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধের পাশ দিয়েই প্রচণ্ড স্রোত বয়ে যাচ্ছে। টি গ্রোয়েনের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পাউবোর রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম কাজের তদারকি করছেন।

প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহারে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলা থাকায় গঙ্গা নদী হয়ে সেই পানি পদ্মায় আসছে। তাই পদ্মার পানি বাড়ছে। বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী তারা পানি পর্যবেক্ষণ করছেন।

তিনি বলেন, ‘নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। পাবনা এবং কুষ্টিয়ার যেসব এলাকায় বাঁধ নেই সেখান দিয়ে পানি ঢুকে পড়তে পারে। তবে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ায় রাজশাহীতে বড় রকমের বন্যা হবে না।’

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলা থাকে। এটি নিয়মিত ব্যবস্থাপনার অংশ। গত কয়েকদিন ধরে গঙ্গা ও পদ্মা নদীর অববাহিকায় অতিবৃষ্টির কারণে নতুন করে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে উজানে ভারতের বিভিন্ন জেলা এবং ভাটিতে বাংলাদেশে বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ের স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং জেলা পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বন্যা হলে তা মোকাবিলায় নেওয়া হয়েছে প্রস্তুতিও।

এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট, পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলের বেশকিছু গ্রামে ইতোমধ‌্যে পানি ঢুকে পড়েছে। বাঘার চরাঞ্চলের ১১টি স্কুল গত রোববার থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুকে জানান, পানিবন্দী এসব মানুষকে সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম জানান, ইতোমধ্যে গোদাগাড়ীর ৭৬টি ও চারঘাটের ২৬টি পরিবারকে পদ্মার চর থেকে এপারে আনা হয়েছে। আরো যেসব পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে তাদেরও আনা হবে।

তিনি বলেন, ‘পদ্মার পানি বাড়লে রাজশাহীর চরাঞ্চলেই বেশি বন্যাকবলিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে পানি শহরে প্রবেশ করবে না।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *