ঘরে বসেই সত্যায়িত হচ্ছে মূল্যবান কাগজপত্র

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে সরকারি ও বিসিএসসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সীল। এমনকি পাওয়া যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তার সার্ভিস ক্রমিক নম্বর সম্বলিত সীলও। এসব সীলে সয়লাব রাজশাহী।

রাজশাহীর রাবার স্ট্যাম্পের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কার সীল নেই সেখানে। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নাম ও সীল বিক্রি হচ্ছে অহরহ। মাত্র ৫০ থেকে ৭০ টাকার বিনিময়ে যে কেউই যে কারো সীল বানিয়ে ফেলছেন। সেইসব সীল দিয়ে ঘরে বসেই কাগজপত্র সত্যায়িত করছে। মাত্র কয়েক টাকার বিনিময়ে নিজেই বনে যাচ্ছেন সরকারি গেজেটভূক্ত কর্মকর্তা। রাজশাহীর মনিচত্বর এলাকায় অবস্থিত সকল রাবার স্ট্যাম্পের দোকানে একই দৃশ্য।

নাম না প্রকাশ করে এক সীল ব্যবসায়ী জানান, এখানে বানাতে আসা সকল সরকারি সীলের কপি আমরা রাখি। ৭০ থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে এগুলো বিক্রি করি। যে কোন সীল তারা বানিয়েও দিতে পারে। এজন্য তাদের দিতে হয় বাড়তি টাকা।

কলেজ ছাত্র হামিদুর রহমান বিপ্লব সীল কিনে সত্যায়িত করছেন নিজের কাগজ। তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা তাদের কাগজ সত্যায়িত করে দিতে ঝামেলা করে। তাই মাত্র ৫০ থেকে ৭০ টাকা দিয়ে সীল কিনে নিজেরাই বনে যান গেজেটভূক্ত কর্মকর্তা। এতে সময় ও ঝামেলা কম হওয়ায় সবাই এই কাজই করেন। তাই তিনিও এটি করছেন। অপরাধ মনে করেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বিক্রি করে আমার কিনি। কোন আইন আছে কী না বা অপরাধ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে, সবাই করে আমিও করি। সরকার যদি এটি বন্ধ করে দেয় তবে আমারও এটি আর পাবো না।

সীল বানানোর দোকানে গিয়ে পাওয়া গেলো রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট আবু আসলামের একটি সীল। এ বিষয়ে আবু আসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি গত ৫/৬ মাস আগে রাজস্ব শাখার সীল বানাতে দিয়েছিলাম আর রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদানের পরে গত ২/৩ মাস আগে আমি এডিএম এর সীল বানাতে দিয়েছিলাম। এখন এটি তারা রেখে দিয়েছে কিনা জানি না। তবে বাজারে সীল বিক্রির বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। এমন কোন অভিযোগ প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, জাল এসব সীলের কারণেই রাজশাহীতে বাড়ছে সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও সীল জালিয়াতির ঘটনাও। গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপনের আদেশ জারি করার অপরাধে পবা ব্রাইটওয়ে কম্পিউটার সেন্টারের অধ্যক্ষকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। সরকারি কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভাধীন ‘ব্রাইটওয়ে কম্পিউটার সেন্টার’ বাতিল করা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রসাসক হামিদুল হক বলেন, সরকারি ও বিসিএসসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সীল বাজারে বিক্রি করা অপরাধ। এটি ঘটলে যে ব্যবসায়ী এটি করবে তাকে জেলে যেতে হবে। যদি কোন সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র: সাহেব বাজার।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *