কেটে ফেলা হলো রাবি প্রধান গেটের সামনে সারি সারি দাঁড়ানো পাম গাছ গুলি

বিশেষ সংবাদ লীড শিক্ষা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটক হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ পথে নজর কাড়তো সড়কের মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি পাম-ট্রি। তবে দু’বছর আগে থেকে গাছগুলোর পাতা শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ডাল-পাতায় দেখা দেয় ‘সাদা ছত্রাক’। যা একটি গাছ থেকে আরেক গাছে ছড়িয়ে পড়ছিল। ফলে দ্রুত হারাতে থাকে ঐতিহ্যবাহী পাম-ট্রি’র মোহনীয় সৌন্দর্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত প্রহরী ও শিক্ষার্থীরাও জানান, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা হালকা বাতাসেও প্রধান ফটক থেকে জোহা চত্বরে যাওয়ার সড়ক ঢেকে যেতো শুকনো পাম-ট্রির পাতা ও ভেঙেপড়া ডালে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরে আসার পর থেকে তা কেটে ফেলার বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়।
সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীও পাম-ট্রি গুলো কেটে নতুন করে লাগানোর বিষয়ে আলোচনাও তোলেন। তবে পাম-ট্রি কাটার বিপক্ষেও ছিলেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। বিশেষ করে সাবেক শিক্ষার্থীরা গাছগুলো নিয়ে বেশি আবেগাপ্লুত। তাদের মনোভাবের কারণে বারবার সিদ্ধান্ত নিয়েও পাম-ট্রি কেটে ফেলা থেকে পিছু হটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন কমিটি।
তবে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকার সুযোগে পাম-ট্রিগুলো কেটে ফেলেছে প্রশাসন। পাম-ট্রি কেটে ফেলে রাখার সেই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেন। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছবিগুলো পোস্ট করে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
রাবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম.এ.কে আজাদ তার ফেসবুকে গাছ কেটে রাখার বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘করোনা তোদেরকেও বাঁচতে দিল না!! আজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের তথা প্রশাসন ভবনের সামনে সারি সারি দাঁড়ানো পাম গাছ গুলি কেটে ফেলা হলো!! জানিনা তাদের কি অপরাধ ছিল!! নাকি তারা করোনা প্রতিরোধে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল!! বহু বছর ধরে কালের স্বাক্ষী এরা। আর কোন দিন তোদের দেখা হবে নারে!! ক্ষমা করিস তোরা!’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শাহনাত মাসুম বাবু লিখেছেন, ‘…বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইটের ভেতরে থাকা পামগাছগুলো উজাড় করা শুরু করেছে! বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গাছ কাটা হচ্ছে আর উপাচার্য এটা জানেন না! এটা কি সম্ভব?’ (সংক্ষিপ্ত রূপ)
একই বিভাগের সাবেক আরেক শিক্ষার্থী বাঁধন অধিকারী ওই পোস্টে মন্তব্য করেছেন, ‘ইশরে! কান্না লাগতেছে গাছগুলোকে কী নির্মমভাবে লাশ বানিয়ে  শুইয়ে দিয়েছে রাক্ষসগুলো।’
পাম-ট্রি কাটায় প্রশাসনের সমালোচনায় মুখর সকলে। তবে প্রশাসনের বক্তব্য ভিন্ন। প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, সেখানে যে গাছগুলো ছিল, তাতে মড়ক লেগেছিল। সাদা ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ছিল। কৃষি প্রকল্প সকল নিয়ম মেনে গাছগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। একই জায়গায় বোটল পাম-ট্রি লাগানো হবে।
কৃষি প্রকল্প দেখভাল করেন রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘যারা ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করেন- সকলে জানেন ওই গাছগুলোর দশা। সড়কের মাঝে ফিস্টেল পাম-ট্রি ছিল। সেগুলোতে অজ্ঞাত কারণে ছত্রাক লেগেছিল। একটি থেকে আরেকটি করে প্রায় সকল পাম-ট্রিতে ছড়িয়ে পড়ে।’
উপ-উপাচার্য বলেন, ‘শুধু পাম-ট্রি নয়, আশেপাশে থাকা অন্য গাছেও এই ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ছিল। আমরা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষকদের সাথেও কথা বলেছি। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- সেখানে এই বর্ষাতে ফিস্টেল পাম-ট্রি রোপণ করা হবে। যা দ্রুত বেড়ে উঠবে। লম্বা ও সৌন্দর্যে এই গাছগুলোর মতোই হবে।’
অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা আরও বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ তাই আমরা এগুলো কেটে বিক্রি করে দিচ্ছি বিষয়টি এমন নয়। এগুলোর কাঠের মূল্যও ব্যাপক নয়, যে প্রশাসন তা বিক্রি করে লাভবান হবে। হ্যাঁ, গাছগুলো যারা ক্যাম্পাসে দেখে গেছেন বা দেখতে অভ্যস্থ, তাদের আবেগের জায়গা থেকে খারাপ লাগবে। সেটা খুবই স্বাভাবিক। তবে বাস্তবতাও দেখতে হবে। কেন আমরা কাটছি, সেটা না জেনে সমালোচনা করাটা উচিত নয়।’
পাম-ট্রি কেটে ফেলার বিষয়ে উপ-উপাচার্যের ‘ছত্রাক লেগে মড়ক ছড়ানোর’ যুক্তি বিষয়ে কথা হয় রাবির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কবীরের সাথে। তিনি বলেন, ‘গাছগুলো আরও আগেই কাটা দরকার ছিল। আমি মনে করি- অনেক দেরিতে কাটা হয়ে গেল। কারণ সেগুলোতে থাকা ছত্রাক আশেপাশে গাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি মানুষের গায়ে পড়লেও তা থেকে রোগ ছড়াতে পারে।’
তবে অধ্যাপক গোলাম কবীরের সাথে একমত নন একই বিভাগের আরেক অধ্যাপক ও গবেষক ড. মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গাছের ছত্রাক থেকে কখনই মানুষের গায়ে রোগ-ব্যাধী ছড়াবে না। এটা ভুল কথা। গাছগুলো এতোদিন সৌন্দর্য ছড়ালো, সেগুলোর পরিচর্যা করা যেত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া যেত। গাছের গোঁড়া খুঁড়ে একটু সার-পানি দিলে নতুন করে সবুজ হয়ে উঠতে পারতো। সেটা কী আমরা করেছি? ’
সূত্র: সোনালী সংবাদ

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *