‘তারেকসহ পলাতকদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে’

বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: তারেক রহমানসহ দণ্ডিত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অপরাধী, মানুষ খুন করা থেকে শুরু করে মানিলন্ডারিং করেছে, এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের আলোচনা চলছে। আমি বিশ্বাস করি আমরা তাদের ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করতে পারব।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন ছিল- জামায়াতকে নিষিদ্ধ এবং বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনা হবে কি না?

জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। এখন তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার একটা মামলা কোর্টে রয়ে গেছে। এই মামলা রায় যতক্ষণ না হবে সেখানে বোধ হয় আমরা কোন কিছু করতে পারি না। আমি আশা করি, কোর্টের রায় খুব শিগগিরই যদি হয়ে যায় তাহলে জামায়াত দল হিসেবে নিষিদ্ধ হবে।

নির্বাচনে জামায়াতকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা ন্যাক্কারজনক- তারা নিবন্ধিত না, সেই অবস্থাতেও তারা বিএনপির সঙ্গে জোট করে করে জামায়াত ইসলামী নামে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছে। জনগণকে ধন্যবাদ জানাই তারা জামায়াতকে ভোট দেয়নি, প্রত্যাখ্যান করেছে।

জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর ছিল। এদেশে গণহত্যা থেকে শুরু করে নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ নানা ধরনের তারা অপরাধ করেছে। স্বাধীনতার পর তাদের অপরাধের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে তাদের বিচার বন্ধ করে দেয়, তাদের ভোটের অধিকার দেয়, রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। যেটা আমাদের সংবিধানে ছিল না। সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়।

সরকারি দলের এমপি মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এদেশের আপামর জনসাধারণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এ বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে এরকম পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছিল। লন্ডন-ভিত্তিক ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট এবং রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের জরিপের ফল সবাই লক্ষ্য করেছেন। আর আমাদের ল্যান্ড-স্লাইড বিজয়ের বহুবিধ কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, একটি সমাজের প্রায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ যখন কোন দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন, তখন তার পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়। আমাদের বেলায় তাই হয়েছে। এদেশের মানুষ আমাদের ইশতেহারের পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় প্রদান করেছেন।

তিনি বলেন, যে কোন গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলো পক্ষ এবং প্রতিপক্ষের মধ্যে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের প্রতিযোগিতা। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলে প্রতিযোগিতা জোরালো হয়। কিন্তু এবারের নির্বাচনে আমাদের যারা প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল তাদের কোন নির্বাচনী প্রস্তুতি বা কৌশল ছিল বলে আমার মনে হয়নি।

বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবির কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে তারা এক আসনে ৩-৪ বা তারও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। তারা দুর্বল প্রার্থী দিয়েছিল। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন- সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। নিজেরা জনগণের জন্য কী করবে, সে কথা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের নির্বাচনী প্লাটফরম ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিভিন্ন আজগুবি প্রতিশ্রুতি ( যেমন- যে কোন বয়সে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ) দেয়, যা জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপির ধানের শীষ মার্কায় যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের মনোনয়ন তরুণ ভোটাররা মেনে নিতে পারেনি। তরুণেরা আর যাই হোক স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষ নিতে পারে না। এসব কারণে ভোটারগণ বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং নৌকার অনুকূলে এবার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। আর সেই কারণেই আমাদের এই বিশাল বিজয় অর্জন। তাই এ বিজয়কে আমি দেশের মানুষের বিজয় বলে মনে করি।

সরকারি দলের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি রেকর্ডের জন্য রাজনীতি করি না। আমার বাবা এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় আল্লাহ’র অশেষ কৃপায় আমরা দু’বোন প্রাণে বেঁচে যাই। আমি এর আগে কোনদিন চিন্তাই করিনি জাতীয় রাজনীতিতে আসব। যদিও ছাত্রাবস্থাতেই আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম।

তিনি বলেন, হত্যা, মামলা, জেল-জুলুম, হত্যার পরিকল্পনা, গ্রেনেড আক্রমণ কোন কিছুই আমাকে আমার সংকল্প থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। আর আমার সংকল্প হচ্ছে আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তিনি দেশটা স্বাধীন করেছিলেন, কিন্তু মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত করার আগেই বর্বর ঘাতকের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে নিহত হন। আমার প্রতিজ্ঞা ছিল এ দেশের মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তি। এ দেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারেন, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের অধিকরী হতে পারেন- তা বাস্তবায়ন করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীত্ব আমার কাছে উপভোগের কোন বিষয় নয়; এটি একটি দায়িত্ব এবং অবশ্যই কঠিন দায়িত্ব। যখনই আপনারা আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন, তখনই আমি আরও বেশি করে দায় বোধ করছি। মানুষের ভালোবাসা, প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব যাতে আমি আরও ভালোভাবে পালন করতে পারি, মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে সব সময়ই আমি এই প্রার্থণা করি। এ জন্য তিনি দেশবাসীর দোয়া চান।

জাতীয় পার্টির ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এরইমধ্যে এ প্রকল্পের ৬২ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত জটিল এ সেতুর পাইল ড্রাইভিং চলাকালে সয়েল কন্ডিশনের কারণে কিছু পাইলের পুনরায় ডিজাইন করতে হয়েছে। দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শ অনুযায়ী এসকল পাইলের ডিজাইন সম্পন্ন করতে কিছুটা অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। এ সত্ত্বেও চলতি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার সর্বাত্নক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপন এবং পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা হতে বরিশাল পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপনের কাজও চলছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরিয়াতপুর ও মাদারীপুর জেলার ৫৮২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল ও যশোর জেলার অবশিষ্ট ১ হাজার ২০৩ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এছাড়া গত ২৭ এপ্রিল চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া গত ১৪ অক্টোবর প্রকল্পের মূল কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছি। সবশেষ ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ।

তিনি জানান, বরিশাল জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার লক্ষ্যে ভাঙ্গা হতে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশদ নকশা প্রণয়নসহ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৩৯ শতাংশ।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সর্বশেষ সার্ভে অনুযায়ী দেশে ২৬ লাখের মতো বেকার রয়েছে। বেকারত্ব দূর করতে আমরা নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠিত হয়ে সেখানে প্রায় সোয়া কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

শুধুমাত্র চাকুরির পেছনে না ছুটে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ গ্রহণের জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেকার যুবকরা বিনা জামানতে মাত্র এক শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিয়ে দুই লাখ টাকার মতো ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। সবাই যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি। বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কারণে সেখানে বিপুল সংখ্যেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কেউ নিজেরা যদি কাজ করে খেতে চায়, সেজন্য আনা ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে কর্মসংস্থানে যেতে পারে, সেজন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *