বাংলাদেশে আবারো ঘোষণা হতেপারে সাধারণ ছুটি

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে গেলে সরকার ফের ছুটিতে ফিরে যাবে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কার মধ্যেই টানা ৬৬ দিনের ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন নির্দেশনা মানা সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ, ট্রেন) চালু হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি নেই।

সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকলে ফের ছুটি দেয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বুধবার (৩ জুন) দুপুরে বলেন, ‘আমরা যদি দেখি আমাদের ব্যাপক অবনতি ঘটছে তাহলে তো আমাদের বিকল্প কিছু থাকবে না। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাÐগুলো চালিয়ে নেয়ার জন্যই এটা খুলে দেয়া হলো।’

তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে মাস্ক পরে নিরাপদ দূরত্বে থাকে, আমরা সেটা বলছি। যখন মানুষ এটা করতে ব্যর্থ হবে, এবং এটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। তখন তো ঘরে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি যে ৮৫ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রোগী ঘরে বসেই চিকিৎসা নিতে পারবে। সংক্রমণ যাতে না বাড়ে সেজন্য আমরা ব্যাপকভাবে চেষ্টা করছি। ছোট দেশ বিশাল জনসংখ্যা, ম্যানেজ করা কঠিন হচ্ছে। আমরা পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করছি ইতোমধ্যে।’

মানুষের চলাচল বাড়লে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে জানিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন স্টেজ আছে, আস্তে আস্তে ছড়াতে ছড়াতে শেষের দিকে হয়তো বেশি ছড়াবে। এর চেয়েও সামনে বাড়বে হয়তো। বেড়ে আবার নামা শুরু করবে।’

সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে সরকারি দফতরগুলোকে অফিস করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৫টি দিন দিয়েছি। আজ চতুর্থ দিন যাচ্ছে। প্রথম দিনের চেয়ে আরও কম সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে অফিস করছি। আমাদের ম্যাসেজটা অলরেডি সব জায়গায় পৌঁছে গেছে। অফিস টাইমটাও খুবই ফ্লেক্সিবল। যার যখন কাজ শেষ হবে দ্রæত চলে যাবে। যদি কেউ ২ ঘণ্টায় কাজ শেষ করতে পারে সে চলে যাবে। যদি না এসে বাসায় বসে করতে পারে করে দেবে। কোনো কিছু আটকাবে না। কিন্তু মুভমেন্টটা কম থাকবে।’

গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হুড়োহুড়ি, বাড়তি যাত্রী হওয়া, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে দেশকে আরো সংকটে নিমজ্জিত করতে পারে। আমি পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংকটে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পরিস্থিতির যদি আরও অবনতি হয় তাহলে জনস্বার্থে সরকার আবারও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ও করোনা সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের আহŸায়ক মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের হাতে আরও কিছুটা দিন সময় আছে। আমরা পরিস্থিতি দেখছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও তো কোনো সমস্যা নেই। তবে অবনতি হতে থাকলে আমরা বসে তখন করণীয় সিদ্ধান্ত নেব।’

মার্চ মাসের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী প্রথম ধরা পড়ে। পরিস্থিতি ক্রমে অবনতির দিকে যেতে থাকলে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় ছুটি বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী গত ৩০ মে ছুটি শেষ হয়।

দীর্ঘ ছুটির কারণে ইতিমধ্যে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাÐে স্থবিরতা নেমেছে। কষ্টে পড়েছে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। তাই এখনও করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না থাকলেও জীবিকা ও অর্থনৈতিক কারণে ছুটির পথ থেকে সরে এসেছে সরকার।

বুধবার (৩ জুন) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে জানানো হয়, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো এতো সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হলো। এতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৪৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬৯৫ জন। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৫ হাজার ১৪০ জনে।

সূত্র: জাগো নিউজ

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *