করোনায় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের কর্মজীবী মানুষ

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাসের থাবায় জীবিকা অর্জন কঠিন হয়ে পড়েছে নগরীর পদ্মা পাড়ের কর্মজীবী মানুষদের। লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকায় শেষ সম্বলটুকু হারিয়েও এখন নিঃস্ব। নিজ নিজ সংসার নিয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছে তারা আর তাকিয়ে আছে ত্রাণ ও আর্থিক অনুদানের দিকে।

এসব মানুষদের জীবিকা উপার্জনের প্রধান মাধ্যম নৌকায় যাত্রী পারাপার ও পদ্মার পাড়ে ভ্রাম্যমাণ খাবার বেচাকেনা।

মঙ্গলবার নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর ধারে নিথর পড়ে রয়েছে ২৬ টি নৌকা। কয়েকমাস পড়ে থাকায় ইতিমধ্যে প্রায় জং ধরে পড়তে শুরু করেছে নৌকাগুলো। এভাবে আর কিছুদিন পড়ে থাকলে একসময় দেখা যাবে নৌকাগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নৌকার মাঝিরা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। ২৬টি নৌকার প্রায় ২০/২২ জন শ্রমিক কাজ করে। তারাও এখন কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

শ্রীরামপুর এলাকার বাসিন্দা নৌকার মাঝি মো. ফিরোজ (৪২) বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বিনোদন কেন্দ্রগুলোও জনশূন্য হয়ে পড়েছে। তাই আমার আয়ের একমাত্র উৎসও বন্ধ হয়ে পড়েছে। লোক না থাকায় নৌকা চালানো বন্ধ হয়ে গেছে। আমি এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছি। আমার বউ, ছেলে-মেয়েসহ পরিবার নিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে এখন আমাদের দিনে ২/১ বার খেয়েই বেঁচে থাকতে হচ্ছে। আমাদের এই দুঃসময়ে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি। তাদের সাহায্য পেলে আমাদের কষ্টটা একটু লাঘব হবে।

ওই এলাকার বেশ কয়েকজন মাঝি রবিউল, বেল্লাল, হেল্লাল, মনির ও টসা বলেন, আমাদের জীবন এখন ধূ ধূ বালুচর। কূল কিনারা নেই বললেই চলে। কর্মহীন হয়ে পড়ায় জীবন চালানো শুধু কষ্টকরই না অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত আমরা মাত্র দুইবার চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্য সামগ্রী পেয়েছি। এগুলো দিয়ে কয়দিন চলে। প্রতিদিনই দেখছি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে কিন্তু আমরা ভুগছি খাদ্যাভাবে।

জানা যায়, পদ্মাপাড়ে প্রায় ৩০ টি চটপটি ও হালিমের দোকান আছে। এই দোকানগুলোতে প্রায় ৪০/৪২ জন কর্মচারী কাজ করে। এখন তারাও কর্মহীন হয়ে অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করছে। চটপটি বিক্রি করে যারা আয় উপার্জন করতেন বিক্রি বন্ধ থাকায় তারাও এখন অসহায় হয়ে পড়েছে।

এদিকে, চটপটির দোকানগুলো পড়ে থাকায় সেগুলো ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ধুলা, বালি, ঝড়, বৃষ্টিতে রাস্তায় পড়ে থেকে জং ধরে এখন সেগুলো অকেজো প্রায়।

রাজশাহীর টি-বাঁধ এর কয়েকজন চটপটির দোকানদার তৌয়োব, নুরুল, ওবাইদুল ও একরাম বলেন, আমাদের টাকা ইনকামের একমাত্র পথ চটপটির বেচাবিক্রি। সারা বছর আমরা চটপটি বিক্রি করেই সংসার চালায়। করোনাভাইরাসে লকডাউনের পর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলেও আমাদের জীবন এখনও থমকে আছে। আমরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় সংসারের খরচ চালাতে পারছি না। প্রথম দিকে দু’একবার ত্রাণ পেয়েছি। কিন্তু এখন আর কেউ ত্রাণ না দেওয়ায় জীবনের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি।

এদিকে করোনাভাইরাসের তাÐবে থমথমে অবস্থানে রয়েছে সারা বিশ্ব। এর প্রকোপে প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে মৃত্যু মিছিলে শামিল হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। মঙ্গলবার পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় পৌনে ৫ লাখ মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। আর তার সাথে সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও বেঁচে থাকার তাগিদে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই চলছে লকডাউনের হিড়িক।

এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। মৃত্যুর খাতায় নাম লিখেছেন এক হাজার ৫০২ জন।

রাজশাহী নগরেও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সোমবার ৪৩ জন শনাক্তের মধ্যে দিয়ে জেলায় আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৭ জনে। যার মধ্যে রাজশাহী নগরে ১৮৬ জন। এ অবস্থায় ইয়োলো জনের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী। তবুও নগরে নেই লকডাউন। বেশিরভাগ মানুষই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *