রাজশাহীতে ফারইস্ট কর্মকর্তা মফিজুল নিজের অনিয়ম চাপা দিতে তদবিরে ব্যস্ত

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর রাজশাহী সার্ভিস সেণ্টারের ভাইস প্রেসিডেণ্ট (উন্নয়ন) মফিজুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নানা অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মফিজুলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের খবর এরইমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় চরম চটেছেন তিনি। এজন্য মফিজুল তার অধ্বস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুষছেন। তার বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের তথ্য সরবরাহ করেছে কে তা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছেন তিনি। ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তদবির শুরু করেছেন নিজের নানা অনিয়ম চাপা দিতে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, মফিজুলের পক্ষ হয়ে চাপাইনবাগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ফারইস্টের রাজশাহী অফিসের এক কর্মকর্তা অধ্বস্তন কর্মকর্তাদের দায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। আর মফিজুল ইসলাম হুমকি দিয়ে অধ্বস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেছেন, আমার যদি কিছু হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো না। অফিসের লোক তথ্য না দিলে সাংবাদিকরা এতো গোপন তথ্য কীভাবে পেল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালেদ হাসান পলিসি নং- ০৬০০০১৬৯৭৩, শহিদুল ইসলাম পলিসি নং- ০৬০০০২১৬৫১, মাহাবুবুল হক পলিসি নং- ০৬০০০২৩৫৯২, শফিকুল ইসলাম পলিসি নং-০৬০০০২৯৪৭৪, আইয়ুব আলীসহ পলিসি নং- ০৬০০০২০৭০৩ আরো অনেকে বিভিন্ন মেয়াদে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী রাজশাহী অফিসে বীমা প্রকল্পের গ্রাহক হন। এক বছর আগে তাদের বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে।

এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বীমা দাবির জন্য আবেদন করেন কোম্পানিটিতে। বাংলাদেশ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষর (আইডিআরএ) আইন অনুযায়ী বীমা শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্য গ্রাহকগণকে তাদের বীমা দাবির অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও তারা বীমা দাবির অর্থ পাচ্ছেন না। গ্রাহকেরা বীমা দাবির অর্থ না পাওয়ার ক্ষেত্রে মফিজুল ইসলাম দায়ী বলে অভিযোগ করেন তারা। অথচ রাজশাহী-নওগাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভাইস প্রেসিডেণ্ট মফিজুল ইসলাম প্রধান কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে এরইমধ্যে কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন।

এদিকে বীমা দাবীর টাকা না পেয়ে মাঠকর্মীদের ওপর ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। প্রায়ই গ্রাহকদের মারধর ও নাজেহালের শিকার হচ্ছেন কোম্পানিটির বীমাকর্মীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বীমাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, বীমা গ্রাহকরা টাকার জন্য আমাদেরকে চাপ দিচ্ছেন। ক্ষুব্ধ এসব গ্রাহক আমাদেরকে মারধর পর্যন্ত করেছে। তারা বলেন, মানুষ কাজ করে জীবন-জীবিকার জন্য, একটু ভালো থাকার জন্য। কিন্তু ফারইস্ট লাইফে কাজ করে এখন আমাদের পরিবার নিয়ে পালানোর উপক্রম। রাস্তায় বের হতে পারি না, গ্রাহকরা টাকার জন্য ঘিরে ধরে। আমাদের পরিবারের লোকজনও এর শিকার হচ্ছেন। মেয়াদপূর্তির পর গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেয়ায় কোম্পানির রাজশাহী অফিসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ধর্ণা দিয়েও কাজ হচ্ছেনা, বরং আমাদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অফিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুল ইসলামের স্বেচ্ছাচারিতা, অস্বচ্ছতা, অবহেলা এবং দুর্নীতির কারণে সুনাম অর্জনকারী ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের রাজশাহী অফিসটি আজ দুর্নামে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। অথচ তিনি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনেছেন।
সূত্র জানায়, চাপাঁইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের হেলালপুর টিকটিকিপাড়ার নামোশংকরবাটি এলাকার নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মফিজুল। অথচ একটি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কর্মকর্তা হয়ে রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় (বাসা নং- ২৩২/২) একটি বহুতল ভবন প্রায় কোটি শেয়ারে নির্মাণ করেছেন মফিজুল ইসলামসহ কয়েকজন। এছাড়া নামে বেনামে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বহু সম্পদ গড়েছেন। এ নিয়ে খোদ নিজ এলাকা এবং নিজ দফতরে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

এদিকে সূত্র জানিয়েছে, ফারইস্টের রাজশাহী অফিসে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙ্গাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মফিজুল ইসলাম। এ নিয়ে দ্ব›দ্ব দেখা দিলে অবশেষে চাপের মুখে শুক্রবার তিনি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি কিনেছেন। রোববার এই ছবি অফিসে টাঙ্গানোর কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের ভাইস প্রেসিডেণ্ট এবং রাজশাহী ও নওঁগা অফিসের নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এমনকি নিউজ না করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে তদ্বির শুরু করেছেন।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *