স্বদেশ বাণী ডেস্ক: রাজশাহীসহ দেশের ৮ সিটি করপোরেশনে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার চালানো এই অভিযান শেষে দুদক বলছে, বিভিন্ন নগর সংস্থায় নতুন ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ, নবায়ন, জন্ম নিবন্ধন সনদসহ বিভিন্ন সেবাপ্রাপ্তি মানেই ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) রাজস্ব শাখায় অনিয়মের নজির পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন রাসিকে চালানো অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন। রাতে তিনিই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের এই কর্মকর্তা জানান, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা রাসিকের রাজস্ব বিভাগে অভিযান চালান। এ সময় ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ তারা পেয়েছেন। অতিরিক্ত টাকা না দিলে লাইসেন্স না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয় এমন অভিযোগের সূত্র ধরে অভিযান চালাতে গিয়ে তারা এ অনিয়ম দেখতে পান।
আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযান চালানোর সময় সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ছিলেন না। নগর ভবনে তারা রাজস্ব বিভাগের প্রধানকেও পাননি। তাই অনিয়মের চিত্রগুলো তারা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে এসেছেন। এসব অনিয়ম সংশোধন করে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে অনিয়মের প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই দুদক কর্মকর্তা।
এদিকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেছেন, নানা অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগে দেশের ৮ সিটি করপোরেশন অফিসে একযোগে আকস্মিক অভিযান চালানো হয়। দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন যাবত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে (১০৬) ট্রেড লাইসেন্স সেবায় হয়রানির অভিযোগ এলে কমিশন অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে একযোগে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে একযোগে অভিযান চালানো হয়।
দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের তত্ত্বাবধানে দুদক প্রধান কার্যালয়, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে এসব অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অভিযানকালে দেখা যায়, রাজস্ব বিভাগের কর অঞ্চল-১ এর অফিস সহায়ক মোহাম্মদ আলী গ্রাহকের কাছে ট্রেড লাইসেন্সের নির্ধারিত ফি ৪ হাজার ৫০০ টাকার স্থলে ১৫ হাজার টাকা দাবি করলে দুদক টিম তাকে সিটি করপোারেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার নিকট সোপর্দ করে। এই অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অভিযানকালে আসা সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে জানা যায় যে, ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সঙ্গে বহিরাগত একটি দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা নগর ভবনের পেছনের গেট সংলগ্ন কয়েকটি ফটোকপির দোকানকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। দালাল নির্মূলে দুদক টিমের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে বেশকিছু সুপারিশ দেওয়া হয়।
অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের মধ্যে বহিরাগত কিছু লোক চেয়ার-টেবিল নিয়ে অফিস করছেন, যারা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। এ ব্যাপারে রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হলে তিনি ওই ঘটনার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি এবং ব্যাপারটি তার জানা নেই বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দুদক টিম তাকে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে একটি রিপোর্ট দাখিল করতে বলেছে।
চট্টগ্রাম ও কুমিল্ল সিটি কর্পোরেশনে অভিযানকালে দেখা যায় ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাবদ গৃহীত অর্থের কোনো রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা সংগৃহীত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কোনো রেকর্ড টিমকে তাৎক্ষণিকভাবে দেখাতে ব্যর্থ হন। তারা এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র একত্র করে দুদক অফিসে পাঠাবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রংপুর সিটি করপোরেশনে অভিযানকালে বেশকিছু অসঙ্গতি দুদক এনফর্সমেন্ট টিমের কাছে ধরা পড়ে। অভিযানকালে দুদক টিম ট্রেড লাইসেন্স প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পায়। এসব অভিযোগের ব্যাপারে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনসমূহ কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।