“ওসির ভালোবাসায় মুগ্ধ হন সাধারণ মানুষও” যার সুস্থতা কামনায় হাজারো ভক্ত ও গুনগ্রাহীদের প্রার্থনা

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী): সমাজের অনেক গুনিজন ভালোকাজে প্রশংসিত হয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের অনেকের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে মৃত্যুর পর। বেঁচে থাকালিন সময়ে যারা ভালোকাজের স্বীকৃতিতে নিজেদের প্রশংসার খবর জানতে পেরেছেন,তাদের একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম। অফিসার ইনচার্জ বাঘা থানা।

তার অসুস্থতার খবরটি পরস্পর ছড়িয়ে পড়ে ব্রেইন টিউমার অপারেশন করার আগে। সেই খবরে ইতিবাচক প্রশংসার সাথে হাজারো নেটিজেন আশির্বাদ/ প্রার্থনা সূচক কমেন্টস দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে । অসুস্থ্যতার সময়ে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে জল্পনা- কল্পনাসহ প্রশংসার কথাও শোনা গেছে লোকমুখে। বিভিন্নভাবে নিউজ করেছেন গনমাধ্যমকর্মীরা। স্বতপ্রনোদিত হয়ে বাঘা থানা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের মসজিদে মসজিদে ওসির রোগমুক্তির জন্য দোয়ার আয়োজন করেছেন জনগন। পুলিশ নিয়ে যখন নেতিবাচকতা এখনও ভালোভাবে কাটেনি। সেখানে দেখা গেছে এই ব্যতিক্রম চিত্র ।

কারণ জানতে মাঠ জরিপে জানা গেছে,কর্মময় জীবনে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন নজরুল ইসলাম। শ্রেণী পেশার সব মানুষের সাথে তার রয়েছে বন্ধুসূলভ আচরন। উদার মনের মানুষ হলেও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় তার রয়েছে কঠোর ভ’মিকা। বিশেষ করে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেননি বলেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কেড়ে ভালো কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন একাধিকবার। তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় উঠে এসেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি পুলিশও মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই। তবে কতিপয় পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে তাদের খারাপ দিকগুলো মুখরোচক হয়ে ওঠে।

বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু জানান, ওসি নজরুল ইসলামকে একাডেমিক এবং পজিটিভ মানুষিকতা সম্পন্ন লোক হিসেবেই আমার মনে হয়েছে। নীতি নৈতিকতার ক্ষেত্রেও মানবিক। তার নৈতিক দায়িত্বের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে উপজেলার অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন থানার পুলিশ সদস্যরাও। উপজেলাবাসীর কল্যাণে সৃজনশীল নির্দেশনা তৈরি করে যেগুলো অধীনস্থ অফিসারদের নিয়ে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। বাঘা উপজেলার মহসীন নামের একজন জানান,জানতাম না এতো মানবিক অনুভূতির পুলিশও আছে। করোনা কিংবা কোভিড-১৯ এর ভয়কে উপেক্ষা করে অন্যের সাহায্যে ছুটে গিয়েছেন নজরুল ইসলাম। তার রোগের কথা শুনে দোয়া করেছি। বাঘার স্থানীয় বসবাসকারীগন ওসি নজরুল ইসলামের উপরে একটা আস্থার জায়গা পেয়েছেন বলে মনে করেন তিনি।

 

২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে বাঘা থানায় যোগদান করেন নজরুল ইসলাম । অদ্যাবদি এই থানাতেই কর্মরত আছেন। ইতিপূর্বে তিনি পাশ^বর্তী চারঘাট, বগুড়ার আদম দীঘি, দুপচাঁচিয়া থানায় অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার মানবিক কর্মকান্ড স্বাভাবিকভাবেই এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
চারঘাটের উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম, সারদা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু, বর্তমান মেয়র একরামুল হক ও সাবেক মেয়র জনাব বিকুল ইসলামসহ অনেকের কাছে ওসি নজরুল ইসলাম, অন্য যেকনো ওসির চেয়ে ভাল সেবা প্রদানে আন্তরিক ও জনগনের প্রতি ইন্টিমেট মর্মে জানায়। তাদের প্রত্যাশা, ভবিষ্যতেও পুলিশ এমন মানবিক আচরণ করবে সাধারণ মানুষের সাথে।

 

অফিসার ইনচার্জ হিসেবে নজরুল ইসলামের প্রথম কর্মস্থল বগুড়ার আদম দীঘি থানায়। সেখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু ও আদম দীঘি প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজার রহমানের সাথে কথা হলে তারা জানান, তার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস জেগে উঠার কারণ হলো আইনের সেবক হিসেবে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজের মাধ্যমে। তাঁর আগে বেটার কাউকে এই থানায় পাওয়া যায়নি। আইনের সেবক হয়ে সমস্যা সমাধানে তার আন্তরিকতার কমতি ছিল না।
দ্বিতীয় কর্মস্থল ছিলো বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানা। ওই এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, দুপচাঁচিয়া প্রেসক্লাব সভাপতি গোলাম ফারুক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ি ময়েন উদ্দিন খান, সাবেক পৌর মেয়র বেলাল হোসেন ও বর্তমান পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর হোসেনসহ অনেক লোকজন তাঁর (ওসি)র বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পরও সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার মতো মানবিক কাজগুলোও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেছেন। তাদের বিচারে নজরুল ইসলাম প্রকৃত অর্থেই আলাদা।

জানা যায়, ওসি নজরুল ইসলাম যখন দূরারোগ্য মেনিনজিওমা রোগে আকান্ত হলেন তখন চিকিৎসার শুরুতেই চারঘাট-বাঘার সাংসদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অনেক ব্যস্ততার মাঝেও প্রায় প্রতিদিনই খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং চিকিৎসায় ফাইনান্স প্রোভাইড করেছেন। আইজিপি মহোদয় যে কোন সময়ের চেয়ে পেশাদারিত্ব, দক্ষ ও মানবিক। রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার সততার কষ্টি পাথরে যাচাইকৃত। আশা করা যেতে পারে, পুলিশ বিভাগও পুলিশ কর্মকর্তার দূর্দিনে পার্শ্বে দাড়াবেন অথবা ইতিমধ্যেই দাড়িয়েছেন বিশ্বাস করতে চাই।

অসুস্থ্যতার সময়ে কেমন আছেন জানতে গিয়ে নজরুল ইসলাম সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা আমাদের সাহায্য করুন আমরা সত্যিই মানুষের স্বপ্নের পুলিশ হতে চাই। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যখন আমাদের কাছে আসতে পারবে ঠিক তখনি তারা অন্ধকার জীবন থেকে আলোর পথে ফিরে আসবে, একজন পুলিশের কাছে সেটাও সম্ভব। একজন অপরাধি কে ঘৃণার দৃষ্টিতে না দেখে আইনের মাধ্যমে তাকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখে আলোর পথে নিয়ে আসা। আমরা চেষ্টা করতে পারি তাকে ভালো করার সুযোগ দেয়ার।

 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ২০৪১ সালে আমরা যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি সে উন্নত বাংলাদেশের আমরাই হবো উন্নত পুলিশ।

স্ব.বা/বা

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *