বনলতার প্লট কেলেংকারি তদন্তে আরডিএকে দুদকের চিঠি

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: বনলতা আবাসিক এলাকার প্লট কেলেংকারি তদন্তে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গত ২৪ জুন রাজশাহী সমন্বিত দুদক অঞ্চলের সহকারি পরিচালক (এডি) ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মোহা:আল আমিন এই চিঠি দিয়েছেন। আগামি ১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য ও নথিপত্র সরবরাহের জন্য সংস্থার চেয়ারম্যান বজলুর রহমানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী দুদকের উপ-পরিচালক মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, আরডিএর বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩১ প্লট কেলেংকারি ও দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। তথ্য হাতে পাওয়ার পর অনুসন্ধানের মুলকাজ শুরু করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনলতার মুল্যবান ৩১ প্লট দুর্নীতির অভিযোগে বঞ্চিতরা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রাথমিক ধরণ বিবেচনা ও যাচাই বাছাই শেষে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে দুদক অঞ্চল রাজশাহীর উপ-পরিচালককে অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়। জুনের প্রথমদিকে প্লট কেলেংকারির অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিযুক্ত হন দুদকের এডি মো: আল আমিন। দায়িত পেয়ে তিনি ২৪ জুন আরডিএর চেয়ারম্যানকে তথ্য সরবরাহের জন্য চিঠি দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বনলতা আবাসিক প্রকল্পের ১৯৩ টি সরকারি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্তসহ মোট ১৫ টি ক্যাটাগরিতে। ওইসময় প্রতি কাঠার দাম ছিল ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত পরিপত্র অনুযায়ী শতকরা ৫ ভাগ হিসাবে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারিদের ভাগে পড়ে মোট ১০টি প্লট। কিন্তু আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারিদের মধ্যে মাত্র ৪ জন প্লটের জন্য আবেদন করেন। ফলে আরডিএ কোটার অবশিষ্ট ৬টি প্লট রেজ্যুলেশান করে পরে অপেক্ষমান তালিকার অন্য কোটার আবেদনকারীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এদিকে ২০১৭ সালে একই প্রকল্পের অবশিষ্ট ৩১ প্লটের জন্য আবেদন নিয়ে একই হিসাবে প্লট ভাগ-বন্টন করা হয়। তবে এবারে রহস্যজনক কারণে ক্যাটাগরির সংখ্যা কমিয়ে মোট ৯ টি করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কোটা রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলেও তাদের আবেদন করারই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

বঞ্চিতদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৩১ মে আরডিএর চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস ও এষ্টেট অফিসার বদরুজ্জামান চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে নিজেদের মধ্যে প্লট ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। সরকারি কোটা অনুয়ায়ী শতকরা ৫ ভাগ হিসাবে ৩১ প্লটের মধ্যে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারিদের ভাগে পড়ে সর্বোচ্চ ২ টি প্লট। কিন্তু এই ৩১ প্লটের মধ্যে চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এষ্টেট অফিসারসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন।

বনলতার প্লটের বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নেন সবচেয়ে বড় আয়তনের ৭ কাঠার একটি প্লট। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ৫ কাঠা ও এষ্টেট অফিসার বদরুজ্জামান নেন ৬ কাঠার প্লট। এছাড়া চেয়ারম্যানের পিয়ন ইউনুস আলী ২ টি, অথরাইজড অফিসারের পিয়ন রেজাউল করিম দুটি, আরডিএর নি¤œমান সহকারি শামসুন্নাহার নুন্নী দুটি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ীচালক শরিফুল ইসলাম ১টিসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন।

অভিযোগকারীরা বলেছেন, ৩১ প্লটে জমির পরিমাণ ৬৬ কাঠা। এর মধ্যে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারিরাই নিয়েছেন ৩১ কাঠা। এই হিসাবে অর্ধেক প্লটই তারা নিয়েছেন। তারা আরও বলছেন, পুর্বপরিকল্পনা মোতাবেক নিজেদের মধ্যে প্লট ভাগাভাগির লক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত কোটায় কোনো প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। উপরন্ত ২০১৩ সালে যে প্লটের দাম ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিল, ৪ বছর পরও একই দামে প্লট দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, প্লটের মুল্যের ওপর আরডিএ শতকরা ১৩ ভাগ হারে সুদ গ্রহণ করে থাকে। এই হিসাবে ২০১৭ সালে কাঠা প্রতি এসব প্লটের দাম পড়ে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। চার বছর আগের মুল্যে প্লট বরাদ্দের ফলে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। আরডিএর একটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে পদ্মা আবাসিক এলাকায় প্রতি কাঠা ১২ হাজার টাকা দরে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। একই প্রকল্পের অবশিষ্ট প্লট ১৯৮৬ সালে ২২ হাজার টাকা কাঠা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, যেহেতু বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে সেহেতু এই বিষয়ে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। তাছাড়া ওই সময় আমি আরডিএতে ছিলাম না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *