ঝুঁকি নিয়ে আড়ানীর বড়াল নদীর উপর নির্মিত রেল লাইনের সেতু পার হচ্ছে যাত্রীরা

বিশেষ সংবাদ লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা:
রেল লাইনের ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। দুর্ঘটনা এড়াতে সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছেনা রেল কর্তৃপক্ষ। এরফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রেললাইনের সেতু পার হচ্ছে যাত্রীরা। এমন অবস্থা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী বড়াল নদীর উপর নির্মিত সেতুর রেল লাইনের। ১৩টি ট্রেন প্রতিদিন দুইবার করে ২৬ বার রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করছে।

রবিবার সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, রেলাইনের লোহার ক্লিপারের পরিবর্তে কাঠের গুজ ও বাঁশের বাতা দিয়ে স্লিপার আটকানো রয়েছে। সেতুর উপর রেল লাইনের স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকানোর জন্য একটি স্লিপারের দুই পাশে ৮টি করে পিন দেয়ার কথা থাকলেও রয়েছে কোনটাতে দুটি, আবার কোনটাতে তিনটি, আবার কোনটাতে একটিও নেই। এছাড়া কোনটানে নাট বল্টু, ক্লিপ, হুক কিছুই নেই। দুই লাইনের গোড়ায় ফিসপ্লেটে চারটি নাট-বল্টু থাকার কথা। কিন্তু স্লিপারে তা নেই। স্লিপারগুলোও বহু যুগের পুরাতন। বেশির ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। এ রেল সেতুর উপর স্লিপারের সঙ্গে লাইন আটকানো কিছু পিন খোলা, সেগুলো হাত দিয়ে বের করা যাচ্ছে, লোহার পিনের জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে কিছু কাঠের গুজ, স্লিপারের লোহার মোটা পাতের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা প্লেন সিটের পাত, স্লিপার আটকানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশের বাতা। এ সেতুটিতে মোট ব্যবহার করা হয়েছে ২৬২টি স্লিপার, সেই ি স্লিপারে ২ হাজার ৯৮টি ক্লিপ থাকার কথা। কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র প্রায় ৯২৮টি। এর কিছু অংশে কাঠের গুজ এবং অন্য জায়গায় ফাঁকা রয়েছে। ২৬২টি স্লিপারের মধ্যে ৬০টি স্লিপার অত্যান্ত ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটির পূর্ব দিক থেকে দুটি পিলারের পর তিন নম্বর পিলারটির নিচে কয়েক বছর আগে গোড়ায় পাথর ফেলা হয়। সেই পাথরগুলো পিলার থেকে দুরে সরে গেছে। সেখানকার পিলারের গুড়ায় পাথর, মাটি কিছুই নেই। ফলে পিলারের উত্তর দিকের নিচে ফাঁকা হয়ে গেছে। ফলে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

আড়ানী হামিদকুড়া গ্রামের মৎস্য শিকারী আবদুল খালেক বলেন, আমি প্রতিনিয়ত এ সেতু এলাকায় বরশি দিয়ে মাছ শিকার করি। যখন এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করে, তখন তিন নম্বর পিলারটি আমার কাছে নড়ছে বলে মনে হয়। এছাড়া সেতুর গুড়ায় পাথর ও মাটি সরে গিয়ে ফাঁকা হয়ে গেছে।

স্থানীয় জোতরঘু গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, সেতুটির কাঠগুলো অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। এ কাঠগুলো পরিবর্তন করা দরকার। আর অনেক স্থানে পিন না থাকায় ট্রেন চলাচল করার সময়ে কাঠ সরে যায়। পিন কম থাকার কারণে কোন রকম ট্রেন চলাচলের জন্য লোহার পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে পিন তৈরী করে স্পিপার আটকে দিয়েছে। এ রেল সেতুতেও রয়েছে বাঁশের ব্যবহার। সেই সাথে কিছু কিছু স্থানে নেই কোন ক্লিপ। ট্রেন ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় যাতে স্লিপার সরে না যায় এজন্য বাঁশ দিয়ে রেখেছে। নাট না থাকায় কাঠের গুজ ব্যবহার করা হয়েছে। যারা এর দায়িত্বে আছেন তারা নাট না দিয়ে কাঠের গুজ দিয়েছে। সেতুটির কিছু স্লিপার নষ্ট হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই পরিবর্তন করে, তবে কি পরিবর্তন করে তা বলতে পারবো না।

আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলী বলেন, ব্রিটিশ আমলের সেতুটি বেশ কয়েক বছর আগে এক সংস্কার করেছিল। পরে তেমনভাবে আর সংস্কার করতে দেখা যায়নি। ফলে এতো দিনের সেতুতে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি দূর্বল হয়ে গেছে। ফলে সেতুটি পূনসংস্কার করা প্রয়োজন।

 

রাজশাহীর পি-ডব্লুউ আই এর ওয়েমেনের প্রধান ইয়াকুব আলী বলেন, আমি আড়ানীর ১৪ নম্বর রেল সেতুর ২৩৫ নম্বর থেকে কালাবিপাড়া ২৪১/০ নম্বর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রেল রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছি। এ এলাকার রেলের সমস্যা ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

রাজশাহীর পি-ডব্লুউ আই ভবেশ চন্দ্র রাজবংশী বলেন, তার কাছে কাঠের গুজ ও বাঁশের বাতা ব্যহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিন বরাদ্দ না থাকায় ঝুঁকি এড়াতে কাঠের গুজ ও ট্রেন চলাচলের সময়ে স্লিপার যেন না নড়ে সে জন্য বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০০টি পিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেগুলো সেতুসহ রেল লাইনের বিভিন্নস্থানে লাগানো হচ্ছে। এছাড়া আড়ানী সেতুর নষ্ট হয়ে যাওয়া ৬০টি স্লিপারের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা দেয়া হয়েছে। সেগুলো পেলে তাৎক্ষনিক লাগানো হবে।

 

বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিম প্রধান প্রকৌশলী আফজাল হোসেনে বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের রেল সেতুগুলো অনেক পুরাতন হলেও এখনো অনেকটা ভালো। আজ অবধি কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। রেল চলার সময় জাম্পিং এ ক্লিপারগুলো সরে বা নড়ে না যায়, এজন্য বাঁশের বাতা ব্যবহার করা হয়েছে। নাটের পরিবর্তে বাঁশের গুজ তো স্থায়ী থাকবে না। এটা হলো অতিরিক্ত সতর্কতা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *