কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বাঘায় ব্যস্ততা বাড়ছে কামারদের, আধুনিকতার ছোঁয়ায় বৈদুৎতিক যন্ত্র ব্যবহার

চারণ সংবাদ বিশেষ সংবাদ লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী): আর কিছু দিন পর ঈদুল আজহা। তার আগেই জমে উঠছে দা-বঁটি,চাকুর বাজার। বছরের এ সময় প্রচুর পরিমাণ দা, চাকু, বঁটি ও চাপাতি জোগান দিতে হয় তাদের। এ জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাঘার বিভিন্ন কামারপট্টির কারিগররা। চাহিদার কথা বিবেচনা করে দিনের পাশাপাশি গভীর রাতেও লোহার সরঞ্জাম তৈরিতে কাজ করছেন কামাররা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ব্যবহার করছেন বৈদুৎতিক যন্ত্র।

 

জানা গেছে,প্রায় শতাধিক লোক এ শিল্পের সাথে জড়িত। ঈদুল আজহার সময় চাহিদা বেশি থাকায় কর্মব্যস্ততা যেমন বেড়ে যায়, তেমনি উপার্জনও ভালো করেন তারা। কোরবানিকে কেন্দ্র করে বেশি অর্ডার আসছে চাপাতি, দা, বঁটি, চুরি ও কুড়ালের। এবারের ঈদে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয়ের আশা করছেন কামারদের অনেকেই।

উপজেলার আড়ানি, দিঘা ,বাউসা,তেথুঁলিয়া,মনিগ্রাম, নারায়নপুর ও বাঘা বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কামারদের ব্যস্ততা। দোকানদারদের কেউ ভাড়াটিয়া, নিজ বাড়িতে বংশানুক্রমে এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। লোকসান ভেবেও এ পেশা তারা ছাড়ছেন না। তবে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা ঈদ সামনে রেখে এ ব্যবসা করে থাকেন।

বাঘা পৌর সদরের দ্বিজেন কর্মকার বলেন, সংসার চালাতে কষ্ট হলেও বাব-দাদার আমল থেকে এ ব্যবসার সঙ্গে রয়েছি। তবে মূল টার্গেট হলো-ঈদ মৌসুমে বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকা উপার্জন করা। গত ঈদে কয়েক হাজার টাকা উপার্জন হলেও কারিগরদের বেতন দিয়ে খুব একটা থাকেনি।
৩৫ বছর কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িত দিঘা বাজারের গোপাল কর্মকার জানান, আকার ভেদে প্রতি পিস ছুরি বিক্রি হয় ৫০ থেকে ১৫০ টাকায়, চাপাতি ৫’শ থেকে ৬’শ টাকায় এবং বঁটি ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায়। তবে দাম বেশির কারণে পুরানোগুলো শান দিয়ে ধারালো করে নিচ্ছেন বেশির ভাগ লোকজন।

কর্মকার দোকানের মালিক আমির হোসেন জানান, কাজের চাপ বেশি থাকলেও যন্ত্র তৈরি জ্বালানির দাম,লোহার দাম ও শ্রমিকের মূল্যে অনেক বেশি। সারাদিন আগুনের সামনে বসে থেকে দিন শেষে ৪০০/৫০০ টাকা আয় করা কষ্ট হয়। এ টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

মীরগঞ্জ বাজারের আলআমিন কর্মকার জানান, বছরজুড়ে এ শিল্পে মন্দাভাব থাকলেও কোরবানির সময় তাদের কদর বেড়ে যায়। ঈদ মৌসুমে কাজের ব্যস্ততা বাড়ে। এছাড়া ধান কাটার মৌসুমে কাঁচি তৈরিতে কিছুটা ব্যস্ততা বাড়ে।

তারা বলেন, যে পাথর কয়লা গেল বছর ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা বস্তা কিনেছিলাম, সেই কয়লা এ বছর কিনতে হচ্ছে ১ হাজার টাকার উপরে। শ্রমিকদের মজুরি দেড়শ’ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে এখন হয়েছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এক বস্তা কাঠের কয়লার দাম এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যা একদিনও যায় না। এক কেজি লোহার দাম ৮০ টাকা। কিন্তু এক কেজি লোহা থেকে একটি দা বিক্রি করি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। তারা জানান,বর্তমানে কামারের তৈরি লোহার জিনিসের পরিবর্তে রেডিমেড যন্ত্রপাতির ব্যবহার হচ্ছে। যার কারণে তাদেও এ পেশায় মন্দাাভাব বিরাজ করছে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *