সেতু আছে রাস্তা নাই, দিঘা-খাগড়বাড়িয়া খালের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ১৮টি সেতু

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা:
দিঘা-খাগড়বাড়িয়া পাশাপাশি দু’টি গ্রাম । এই গ্রাম দু’টির মধ্য দিয়ে চলমান ছিল চন্দনা নদী। সেই পরিচিত নদী চন্দনা এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। আর এই খালের উপর চলছে একর পর এক সেতু নির্মাণ। গ্রাম দু’টির দুই কিলোমিটারের মধ্যে বর্তমানে নির্মাণাধীন একটি সহ আঠারোটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়াই মরা খালের ওপরে সেতু নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা-খাগড়বাড়িয়া গ্রামে।

মরা খালটির দুই কিলোমিটারের মধ্যে ছোট বড় মিলে ১৮টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪ ফুট লম্বা একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে যে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছে এটি দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট। এটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের দাবি, এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, অন্য সেতুগুলোর কমবেশি প্রয়োজন থাকলেও খাগড়বাড়িয়া বড় মসজিদের সামনে, দিঘা পূর্বপাড়া (আঠালিয়াপাড়া) ও এর শেষ মাথায় বর্তমানে নির্মাণাধীন সেতু নির্মাণ করে শুধুই সরকারের অর্থ অপচয় করা হয়েছে। বর্তমানে যে সেতুটির নির্মাণকাজ চলছে এটি দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট। এটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

গত সোমবার (১৫ জুলাই) সেখানে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর পাশের রাস্তা দিয়ে সেতুর কাছে গিয়ে দেখা যায়, খালের কাছে গিয়েই রাস্তাটি শেষ হয়েছে। খালের দক্ষিণ পাশে আমবাগান। বাগানের ভেতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার কোনোই রাস্তা নেই। আমবাগানের মালিক হাশেম আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাগানের ভেতর দিয়ে সরকারি কোনো রাস্তা নেই। সেখানে রাস্তার কোনো প্রয়োজনও নেই। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আঠালিয়া পাড়ার মাঠে যারা গরু-ছাগল চরায়, তারা আগে এক মাঠের ফসল নষ্ট করত, এখন তারা দুই মাঠেরই ফসল নষ্ট করবে। এখানে সেতু নির্মাণ মানে সরকারের অর্থের অপচয় করা ছাড়া আর কিছু নয়। সেখানে ছিলেন এলাকার আরো কয়েকজন মানুষ। তারাও বললেন, সরকারের অর্থ অপচয় করা ছাড়া এখানে সেতুর তো কোনো প্রয়োজন নেই।

একই খালের ওপরে নিমার্ণাধীন সেতু থেকে খানিকটা পশ্চিম দিকে দিঘা পূর্বপাড়ায় (আঠালিয়াপাড়ায়) গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রায় ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪ ফুট লম্বা যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে,তার উত্তর পাশেও ফসলি জমি। সরকারি কোনো রাস্তা নেই। এই সেতুর পাশে গৃহবধূ যুথী বেগমের বাড়ি। সেতুর প্রয়োজন সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এত বড় সেতু হবে, এটা কল্পনা করেননি। যেহেতু ওপাশে রাস্তা নাই, সেক্ষেত্রে একটা ছোট রিং বসালেই মাঠে যাওয়ার কাজ চলত। তবে সেতু হওয়াতে মাঠে যাওয়ার একটু সুবিধা হয়েছে বলে মনে করেণ তিনি। সেতুর উত্তর পাশে দেখা গেল কয়েকটি বাড়ি। তাদের যাতায়াতের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।

একইভাবে খালের উজানে উত্তর দিকে খাগড়বাড়িয়া গ্রামের বড় মসজিদের পাশে একই বছর আরও একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এই সেতুটি আরও বড়। এটি ৩০ ফুট লম্বা একটি সেতু। এই সেতুর উত্তর পাশে গাড়িঘোড়া যাওয়ার মতো কোনো রাস্তা নেই। উত্তর পাশে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। বাড়িগুলোতে যাতায়াত করার জন্য এই সেতুর প্রায় ৫০ মিটার পূর্ব দিকে একটি বড় সেতু এবং ৫০ মিটার পশ্চিম দিকে আরেকটি ছোট সেতু রয়েছে। এলাকার লোকজন ছোটবড় দুটি সেতু দিয়েই অনায়াশে চলাফেরা করতেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, এখানে কোনো সেতুরই প্রয়োজন নেই। তারপরেও মানুষ যত সুবিধা পাবে, ততোই মানুষের ভালো। সেই ক্ষেত্রে এখানে বড়জোর একটি রিং কালভার্টই যথেষ্ট ছিল।
তারা জানান, গাড়িঘোড়া ও তেমন মানুষ চলাচলের প্রয়োজন না থাকায় সেতুর ওপরে স্থানীয় লোকজন ধান ও সেতুর রেলিংয়ের ওপরে কাপড় শুকানোর কাজ করেন।

দিঘা ঋষিপাড়ায় এই খাল বেশ চওড়া। সেখানে খালের ওপর দিয়ে একটি চওড়া রাস্তা রয়েছে। ছোট সেতুর ওপর দিয়ে গাড়িঘোড়া অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চলাফেরা করে। যে কোনো একটি বড় সেতু এখানে হওয়া উচিত ছিল বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

এই তিনটি সেতুর ব্যাপারে কোনো চাহিদা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, এই সেতু নির্মাণের ব্যাপারে তাঁর কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, খাগড়বাড়িয়া বড় মসজিদের পাশে বড় জোর একটি ‘ইউ ড্রেন’ করলেই হতো। অত বড় সেতুর ওখানে কোনো প্রয়োজন নেই। দিঘা পূর্বপাড়া যে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে সেটিরও কোনো প্রয়োজন নেই। উত্তর পাশে নামার কোনো সরকারি রাস্তাও নেই। আর বর্তমান সেতুটি যেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটিরও কোনো প্রয়োজন নেই। সেখানেও সেতুর দক্ষিণ পাশে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। এ সব কাজের ব্যাপারে তিনি কোনো চাহিদা দেননি বলে জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফরিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সেতুটি উপজেলার বেলগাছিতে করার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু বেলগাছিতে আরও বড় সেতু লাগবে। এ জন্য জায়গা না পেয়ে সেখানে করা হচ্ছে। সেতুর দক্ষিণ পাশে রাস্তা নেই, এটা তিনি জানেন না বলে জানান। আঠালিয়াপাড়া পূর্বপাড়ার সেতুর ব্যাপারে তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে। আর খাগড়বাড়িয়ায় আগে একটি সেতু ছিল। তার স্থলে নতুন সেতু করা হয়েছে। তিনি বলেন, সেতুর অনেক বরাদ্দ এসেছে। দেওয়ার জায়গা পাচ্ছেন না। তিনি এই প্রতিনিধিকে সেতুর জন্য জায়গার নাম প্রস্তাব করতে বলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *