বাঘা প্রতিনিধি:
সময় বদলেছে। কালের বির্বতনে মুছে যাচ্ছে ‘হালখাতা’। তবু নববর্ষের সমার্থক হালখাতা। বকেয়া পাওনা আদায়ে পয়লা বৈশাখের সেই রীতি পাল্টিয়ে বছরের যে কোন একদিন এখন হালখাতা করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। তারই একজন হলেন- তৈলে ভাজা সিঙ্গারা,পিঁয়াজু, পুরি,চপের ক্ষুদে ব্যবসায়ী মহাতালেব। বকেয়া পাওনা আদায়ে আয়োজন করেন ভুরি ভোজের। গ্রাহকদের খাওয়ান খিচুড়ি-মাংস। দুই হাজার,তিন হাজার থেকে এক’শ পঞ্চাশ, দশ, বিশ কিংবা পাঁচ টাকার গ্রাহক হলেও পেটপুরে খিচুড়ি-মাংস খাওয়া থেকে বাদ পড়েননা কেউ । শুধু তারাই নন, কেউ যদি তার হালখাতা দেখতে যান,তাদেরও খাওয়ান এই খাবার। ইনি হলেন রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার তুলশিপুর গ্রামের খেড়ুর মোড়ের ক্ষুদে ব্যাবসায়ী মহাতালেব।
এক বা দুই বছর নয়। বিগত আঠারো বছর ধরে তার দোকানে হালখাতা করে আসছেন তিনি। এবছরও তাঁর ব্যাতিক্রম হয়নি। দিনটি বেছে নেন শ্রাবন মাসে। হালখাতা ঘিরে মাস ভর চলে তাঁর প্রস্তুতি। এবার আয়োজন করেছেন শ্রাবন মাসের ৮ তারিখে। তাঁর কথায়, ব্যবসার শুরু থেকেই আমার হালখাতায় খদ্দেরকে খাওয়াতে ভালো লাগে। সেজন্য দোকানে পহেলা বৈশাখে হালখাতা না করে এই দিনটিতে হালখাতা শুরু করি। যাতে বছরভর চলে বিকিকিনি। প্রথম প্রথম অনেকে বিষয়টি একটু অন্য ভাবে দেখলেও এখন দোকানের ক্রেতারাও হালখাতার দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। লাভক্ষতির হিসেবও করেননা। অভাব তাই নিত্য ছাড়ে না পিছু। তার পরও জীবনের খেরোখাতার হিসাব শেষ করেন ‘ভালবাসার হালখাতায়’। সন্ধ্যা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত দোকানে চলে হালখাতা।
মহাতালেব প্রতি বছর এই দিনটিতে দোকানকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলেন। কার্ড ছেপে দোকানের ক্রেতাদের পাশাপাশি এলাকার বিশিষ্টদের আমন্ত্রণ জানান তিনি। এদিন দোকানে হালখাতা করতে আসা আফছার আলী ও মাইনুল হক নামের আরো একজন বলেন, তাঁর এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকি।
মঙ্গলবার(২৩-৭-১৯) সন্ধ্যায় হালখাতার দোকানে দেখা গেল, তার দোকানে হালখাতা নামেই ভুরিভোজের পালা। খিঁচুড়ির সাথে দুই পিচ মুরগীর মাংস পরিবেশন করা হয়। সবাই খাচ্ছেন পেটপুরে। খদ্দেরকে নিজেই খাবার দিচ্ছেন আর তার কাজে সহযোগিতা করছেন তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়–য়া ছেলে তাইয়িব উদ্দীন। বাঁকির কথা জানতে চাইলে মহাতালেব বলেন, এবছর ১লাখ টাকার নীচেই আছে। খদ্দের আছে প্রায় দুইশত মতো। পাঁচ টাকার খদ্দেরের হিসেব নেই। উর্ধ্বে পঁচিশ’শ টাকার খদ্দেরও রয়েছে। খেতে দিলেও সবাই আসেননা।
মহাতালেব বলেন, শহরের নামি দামি রেস্টুরেন্টের খাবার বাঘাবাসিকে খাওয়ানোর পাশাপাশি নিজের রেস্টুরেন্টকে অন্যদের থেকে আলাদা করারও একটা চিন্তা ছিল। সেখান থেকেই ভুনা খিচুড়ি। তিনি বললেন, উপজেলায় তিনিই এ বিশেষ খিচুড়ি করে থাকেন। ঢাকায় এক বাবুর্চির কাছ থেকে বিশেষভাবে খিচুড়ি রান্না শিখেছিলেন। মহাতালেব বলেন, ‘নিজ এলাকায় আসার পরে ভাবলাম মানুষকেও খাওয়াই। আঠারো বছর আগে আমি এইটা চালু করি। বিকেলে সিঙ্গারা,পিঁয়াজু, পুরি ও চপ তৈরি করে বিক্রি করেন।
উপজেলার তুলশিপুরের খেড়–র মোড়ের গলিতে ‘মহাতালেবের দোকান। খিচুড়ির জগতে এর বেশ নামডাক। চাল ও মুগের ডালসহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে রান্না এর স্বাদ অন্যান্য খিচুড়ির চেয়ে একদমই ভিন্ন। সকালে খিচুড়ি পরিবেশন করা হয়। এলাকার ছাড়াও দুর দুরান্তের লোকজন আসেন তার তৈলে ভাজা সিঙ্গারা,পিঁয়াজু, পুরি ও চপের স্বাদ নিতে।