সব রেকর্ড ছাড়িয়ে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঘণ্টায় ৪৬ রোগী হাসপাতালে

বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে! চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৬৩৭ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে শুধু চলতি (জুলাই) মাসেই ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ৪৫০ ডেঙ্গু রোগী। সরকারিভাবে ‘মহামারি’ শব্দটিতে আপত্তি থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে এ বছর বিশেষ করে চলতি মাসের মতো এত বিপুলসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তির কোনো অতীত রেকর্ড নেই বলে স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেল্থ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি জাগো নিউজকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এক হাজার ৯৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এ হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৪৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৯৬ জন হলেও প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন হাজার হাজার জ্বরাক্রান্ত নারী-পুরুষ-শিশু ডেঙ্গু টেস্ট করার জন্য ছুটে যাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ চিকিৎসকের পরামর্শে বাসাবাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে তিন হাজার ৮৪৭ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে করার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু এনএস ওয়ানসহ আরও তিন ধরনের টেস্ট করার জন্য ফি নির্ধারণ করেছে ।

বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্ট (এনএস ওয়ান) ফি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, আইজিএম ও আইজিই এ দুটো পরীক্ষার ফি একত্রে কিংবা এককভাবে ৫০০ এবং সিবিসি ৪০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে।

মহাখালী রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক রোগতত্ত্ববিদ ডা. মাহমুদুর রহমান সোমবার জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এ মুহূর্তে সমাজের সব স্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস ও ওষুধ স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

কার্যকরভাবে ওষুধ ছিটাতে পারলে এক সপ্তাহের মধ্যে মশা কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ডা. মাহমুদুর রহমান।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে মোট আক্রান্ত এক হাজার ৯৬ জনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১২৫, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১১৩, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৪, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৪৮, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৪১, বারডেম হাসপাতালে ২৩, বিএসএমএমইউতে ৩৭, পুলিশ হাসপাতাল, রাজারবাগে ২১, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০, বিজিবি হাসপাতাল, পিলখানায় ১০ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭৯ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।

এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ২৬৫ জন ভর্তি হন। ঢাকা শহর ছাড়া ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০১ জন, খুলনা বিভাগে ১৭ জন, রংপুর বিভাগে ১৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪২ জন, বরিশাল বিভাগে ছয়জন ও সিলেট বিভাগে ১৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন।

স্বাস্থ্যতথ্য হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বাইরে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৮৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৩১ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অবশ্য অনেক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *