রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ

বিশেষ সংবাদ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসে চলমান ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন নির্মাণাধীন ২০ তলা একাডেমিক ভবনের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মোমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গত শনিবার তিনি ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন নির্মাণাধীন ভবনটির ঠিকাদার কোম্পানির কাছে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের এই নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বলে জানা গেছে। তিনি এর আগেও ৩৪ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এসব অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন ওই নেতা। তার দাবি ‘চাঁদা নয় ঈদ সালামি’ চেয়েছেন তিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ রাবির ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৩৬৩ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়। প্রকল্পের আওতায় দেশরতœ শেখ হাসিনা হল, এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল, ১০ তলা ভবনবিশিষ্ট শিক্ষক কোয়ার্টার, ২০ তলা একাডেমিক ভবন, ড্রেন নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। পরে বাজেট সংশোধিত হয়ে ২০১৯ সালে ৫১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মজিদ সন্স’ ১০ তলা বিশিষ্ট শহীদ কামারুজ্জামান আবাসিক হল ও ২০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের কাজ পায়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভবনের কাজ চলাকালে ছাত্রলীগ নেতা মোমিন সেখানে গিয়ে হল চালানোর খরচের কথা বলে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু প্রকল্পটির একজন সহকারী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এর আগে তাকে ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে তিনি তাদের কাছে চাঁদা চাওয়া শুরু করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পটির এক কর্মকর্তা বলেন, এখন ভাই আমরাও ভীত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের কোম্পানির উপর মহলে জানানোর পর তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। গত ২ দিন ধরে আর আসেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুটি ভবনের নির্মাণ কাজের দেখাশোনা করেন প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম। তবে তার অধীনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে রয়েছে প্রকৌশলী আরফান। তিনি ২০ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজের দেখভাল করেন।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের একজন সহকারী ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ছাত্রলীগের ওই নেতা গত জুন মাসের শেষ দিকে একবার ৩৪ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা নিয়ে গেছে। ফের শনিবার ওই ছাত্রলীগ নেতা এসে ফের ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।

চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোমিনুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়ে চাঁদা দাবি করিনি। আমাকে একদল লোক ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। সামনে শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন তাতে আমিও একজন পদপ্রার্থী। আমাকে দমিয়ে রাখার জন্য এমন ষড়যন্ত্র করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী খন্দকার শাহরিয়ার আলম বলেন, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল চাঁদা চাওয়ার বিষয়ে। পরবর্তীতে আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাই। এখন পর্যন্ত আমি যতদূর জানি উপাচার্য স্যার এই বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, লিখিত অভিযোগ আমি হাতে পাইনি। হাতে পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, একজন ছাত্রলীগ নেতা বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ এসেছে। যাচাই বাছাই করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *