শুধুই কি হারের বৃত্ত ভাঙার ম্যাচ?

খেলাধুলা

স্পোর্টস ডেস্ক: রাজ্য শাসন করতে রাজাকে হতে হয় ইস্পাত-কঠিন। তবেই রাজা শক্ত হাতে রাজ্য শাসন করতে পারেন। নয়তো প্রতিপক্ষের হামলায় পরাজয় নিশ্চিত! ক্রিকেটে অবশ্য এসবের কোন বিধান নেই, বড় কিংবা ছোট দল বলে কোন কথা নেই। মাঠের পারফরম্যান্সই ফল নির্ধারণ করে দিতে যথেষ্ট।

কিন্তু বাংলাদেশের শেষ তিনটি টেস্টের পারফরম্যান্সে মনে হচ্ছিল প্রতিপক্ষ দল বুঝি শক্তিধর কোন রাজা! ফলে রাজাকে বধ করে রাজ্য জয় করা সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই। অবশেষে বাংলাদেশ সেই কাজটিই সুনিপুণভাবে করতে সক্ষম হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা তিনটি ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জয় স্বস্তির সুবাতাস এনে দিয়েছে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে।

ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা তিনটি টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ছিলেন বিরক্ত। সংবাদ মাধ্যমে কয়েক দফা জানিয়েছিলেন সেই কথা, ‘এটা যে বাংলাদেশ আমার বিশ্বাসই হয় না।’ বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে যে গুমোট ভাবটা ছিল, সেটা হয়তো অনেকটাই কেটে যাবে এই জয়ে!

পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে হয়তো উজ্জ্বীবিত বাংলাদেশকেই পাওয়া যাবে। কিন্তু খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে গেলে হতো বিস্তর সমালোচনা। তবে মুশফিকুর রহিম-মুমিনুল হক সেসব হতে দেননি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। প্রভাব বিস্তার করে চার সেশন আগেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে জিতেছে ১৪তম টেস্ট।

এদিন চা পানের বিরতির আগে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারায় বাংলাদেশ। টেস্টে বাংলাদেশের এটি ১৪তম জয়, যার সাতটি আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে! ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ যাবৎ কালে সবচেয়ে বড় জয় আজকেরটি-ই।

জিম্বাবুয়ে ছাড়াও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের। ২০১৮ সালে সাকিবের নেতৃত্বে মিরপুরে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে জেতে ইনিংস ও ১৮৪ রানের ব্যবধানে।

মঙ্গলবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া জয়টি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে পয়েন্ট বাড়াতে ভূমিকা রাখলেও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলে কোন ভূমিকা রাখবে না। কেননা টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৮ দলকে নিয়ে শুরু হয়েছে এই চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে নেই জিম্বাবুয়ে। তার ওপর বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে একেবারে বাজেভাবে।

ভারতের বিপক্ষে ইন্দোর ও কলকাতায় দুটো টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের পর রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষেও একই ফল অব্যাহত ছিল। তাই আগামী এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটি ম্যাচ হেরে এমনিতেই কোণঠাসা বাংলাদেশ। তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া এই জয়টি তামিম-মুমিনুল-মুশফিকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে নিশ্চিতভাবেই।

যদিও জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণে আহামরি কিছু ছিল না। তবে টেস্টে সেঞ্চুরি কিংবা ডাবল সেঞ্চুরি করা মোটেও সহজ কিছু নয়। সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। সোমবার শেষ বিকালে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ টেস্ট রান সংগ্রাহক বনে গেছেন তিনি। ইডেনে টানা দুই ইনিংসে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হওয়া মুমিনুলও পেয়েছেন সেঞ্চুরি।

বোলিংয়ে গত কয়েক টেস্ট ধরেই ধারাবাহিক ছিলেন আবু জায়েদ রাহী ও ইবাদত হোসেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনসুইং-আউটসুইংয়ে রাহী নিজেকে আরেকবার প্রমাণ করেছেন।

নবীন ডানহাতি স্পিনার নাঈম হাসানকে নিয়ে নির্বাচকদের প্রত্যাশা ছিল। সেই প্রত্যাশা তিনি ষোলাআনা মেটাতে পেরেছেন এই টেস্টে। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এমনকি দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারও গড়েছেন। ৯ উইকেট নিতে ১৫২ রান খরচ করেছেন এই অফস্পিনার। নাঈমের এমন পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে ভিন্ন কন্ডিশনেও আত্মবিশ্বাস জোগাবে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *