রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে ফিরলেন তামিম

খেলাধুলা লীড

স্পোর্টস ডেস্ক: অনন্য, অসাধারণ তামিম ইকবাল। শক্ত হাতে দিলেন সমালোচনার জবাব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের দিনটিকে নিজের করে নিলেন তিনি। গড়লেন একের পর এক রেকর্ড। অবশেষে থামলেন ড্যাশিং ওপেনার। কার্ল মুম্বার বলে শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরলেন তিনি।

ফেরার আগে ১৩৬ বলে ১৫৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেন তামিম। ২০ চার ও ৩ ছক্কায় এ নান্দনিক ইনিংস সাজান তিনি। এটিই তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি।

এ ম্যাচে খেলতে নামার আগে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হচ্ছিলেন তামিম। ধীর হয়ে গেছেন, দলকে মন্থর শুরু এনে দিয়ে বিপদে ফেলছেন-এরকম কতশত বাক্যবাণে জর্জরিত হচ্ছিলেন তিনি। তাকে রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছিলেন সমালোচকরা।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৫ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ২৯২ রান। মোহাম্মদ মিঠুন ও মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট করছেন।

মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম ম্যাচেও টস জেতেন তিনি। প্রথম ওয়ানডেতে দাপুটে জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে টাইগাররা। দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিততে চান তারা। সেই লক্ষ্যে শুরুটা দারুণ করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান তোলেন তারা।

এ পথে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ড গড়েন তামিম। টপকে যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে। নিষেধাজ্ঞার কারণে আপাতত খেলার বাইরে তিনি। সাকিব জিম্বাবুইয়ানদের বিপক্ষে ৪২ ইনিংসে করেন ১৪০৪। ৪০ ইনিংসে তাকে ছাড়ান তামিম। তিনি ১৩৯৮ রান নিয়ে খেলা শুরু করেন।

তামিমের কীর্তির পরই দুর্ভাগ্যক্রমে রানআউট হয়ে ফেরেন লিটন। ড্যাশিং ওপেনারের ড্রাইভ ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি বোলার কার্ল মুম্বা। তার হাতে লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকা লিটন চেষ্টা করেও সময়মতো ক্রিজে ফিরতে পারেননি। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এদিন দুই অংকের ঘরও স্পর্শ করতে পারেননি (৯)। সেই রেশ না কাটতেই তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে রানআউটে কাটা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত।

তবে স্বচ্ছন্দে খেলে যান তামিম। ব্যাটে ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। ছন্দময় ব্যাটিয়ে ফিফটি তুলে নেন তিনি। এ নিয়ে ৮ মাস এবং ৭ ম্যাচ পর হাফসেঞ্চুরি পান তিনি। বাঁহাতি ওপেনার সবশেষ অর্ধশত করেন ২০১৯ সালের ২০ জুন, নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে।

এর আগে খানিক ব্যবধানে দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে একটু চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেই অবস্থায় ক্রিজে এসে দলের হাল ধরেন নির্ভরতা প্রতীক মুশফিকুর রহিম। তামিমকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন তিনি। এক পর্যায়ে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে দুজনের মধ্যে। উভয়ই রানের নহর ছোটান। তাতে হু হু করে বাড়ে দলীয় রান। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে উইসলি মাধেভেরের শিকার হয়ে ফেরেন মুশি। ফেরার আগে অবশ্য ক্যারিয়ারে ৩৮তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি।৫০ বলে ৬ চারে ৫৫ রান করেন মিস্টার ডিপেন্ডবল।

তবে একপ্রান্ত আগলে রাখেন তামিম। লম্বা সময় পর সূচনা থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করেন তিনি। ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। খেলেন সব নান্দনিক শট। অনুমিতভাবেই ইতিহাস গড়েন ড্যাশিং ওপেনার। স্পর্শ করেন বহুল প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭০০০ রানের অভিজাত ক্লাবে পৌঁছান তামিম। ২০৬ ম্যাচে এ কীর্তি গড়েন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম ৩, ৫ ও ৬ হাজার রানের মাইলস্টোনও স্পর্শ করেন দেশসেরা ওপেনার। সমান ম্যাচ খেলে ৬৩২৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পরের স্থানে রয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। তার রান ৬১৭৪।

এখানেই ক্ষ্যান্ত থাকেননি তামিম। ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই দোর্দণ্ড প্রতাপে অনবদ্য সেঞ্চুরি তুলে নেন ড্যাশিং ওপেনার। এটি তার ক্যারিয়ারের ১২তম তিন অংক ছোঁয়া ইনিংস। এ নিয়ে ১৯ মাস ও ২৩ ম্যাচ পর তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন তিনি।

এসময়ে তামিমকে যথার্থ সঙ্গ দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দারুণ জোট বাঁধেন তারা। তাদের ইস্পাত কঠিন জুটিতে খেই হারিয়ে ফেলে জিম্বাবুয়ে। ফলে বিদ্যুতগতিতে বাড়ে বাংলাদেশের রান।

কিন্তু আচমকা থেমে যান মাহমুদউল্লাহ। ফিফটি থেকে মাত্র ৯ রান দূরে থাকতে টিসুমার বলির পাঁঠা হন তিনি। এতে ভাঙে ১০৬ রানের জুটি। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *