স্বদেশবাণী ডেস্ক: আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে জীবনে প্রথমবারের মতো ব্যাট করতে নেমেই অর্ধদশকের দেখা পেলেন ভারতের তরুণ ব্যাটসম্যান সূর্যকুমার যাদব। তার ফিফটিতে ঢেকে যায় বিরাট কোহলির ব্যর্থতা। ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা আনল ভারত।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে টসে জিতে বিরাট কোহলিদের ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান ইংল্যান্ড অধিনায়ক এইউন মরগান।
লেগস্পিনার আদিল রশিদকে ম্যাচের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে শুভসূচনা করেন রোহিত শর্মা। ওই ওভারে আরও একবার বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছে যান রোহিত।
রোহিতের ব্যাট থেকে বিধ্বংসী ইনিংস দেখার অপেক্ষা মনোযোগী হন ভারত সমর্থকরা।
কিন্তু সমর্থকদের এবারও হতাশ করে পরের ওভারে জফরা আরচারের স্লোয়ারে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন রোহিত। ১২ রানের বেশি আর করা হয়নি তার।
ইশান কিষাণের চোটে দলে সুযোগ পাওয়া সূর্যকুমার যাদব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বল মোকাবিলা করেই আরচারের বল উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন।
অপরপ্রান্তে লোকেশ রাহুল স্পর্শ করেন দুই অঙ্ক। তবে ওপেনার রোহিতের মতো তিনিই ১৭ বলে ১৪ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে এটিই তার সেরা পারফরম্যান্স। প্রথম তিন ম্যাচে মাত্র ১ রান করেছেন রাহুল। মারকুটে এই ব্যাটসম্যান এবার পরাস্ত হন বেন স্টোকসের পেসে।
রাহুলের পর ব্যর্থ হন অধিনায়ক কোহলিও। ৫ বল ক্রিজে থাকতে পেরেছেন মাত্র। ১ রান করে সেই আদিল রশিদের গুগলিতে শেষ হয় কোহলির ইনিংস।
সতীর্থদের এমন আসা-যাওয়ার মধ্যেও নিজের মতো খেলে যেতে থাকেন সূর্যকুমার যাদব।
এবার যাদবকে যোগ্য সঙ্গ দেন উইকেটরক্ষক ব্যাটম্যান ঋষভ পন্ত। ৩১ বলে ৫৭ রান করে স্যাম কারানের বলে আউট হন যাদব। ৬ চার ও ২ ছক্কায় টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি সাজালেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
অন্যদিকে আরচারের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে পন্তের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রানের ক্যামিও ইনিংস। পন্তের পর দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন শ্রেয়াস আইয়ার। মাত্র ১৮ বলে ৩৭ রান করে সংগ্রহ বাড়িয়ে নেন দ্রুতগতিতে।
নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে ১৮৫ রান সংগ্রহ করে ভারত।
১৮৬ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারে কোনো রান নিতে পারেনি ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টির মতো মারমার কাট ম্যাচে মেডেন ওভার পান ভুবনেশ্বর কুমার।
নিজের পরের ওভারে আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক জস বাটলারকে থামিয়ে দেন ভুবনেশ্বর। ৯ রানের বেশি করতে পারেননি বাটলার।
তিনে নামা ডেভিড মালান ব্যক্তিগত ৩ রানে জীবন পান। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। সিরিজে প্রথমবার খেলতে নামা লেগস্পিনার রাহুল চাহারকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। ১৭ বলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন মালান।
অন্যপ্রান্তে দারুণ খেলতে থাকেন জেসন রয়। ২৭ বলে ৬ চার ও একটি ছক্কায় ৪০ রান করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।
তবে অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার চতুরতায় থেমে যেতে হয় তাকে। রয়ের আউটের পর মাঠে ঝড় তোলেন স্টোকস-বেয়ারস্টো জুটি।
ওয়াশিংটন সুন্দরকে তুলোধোনা করতে থাকেন তারা। সুন্দরের টানা তিন বলে মারেন দুটি চার, একটি ছক্কা মারেন বেয়ারস্টো। এ জুটি মাত্র ২৯ বলে ৫০ রান স্পর্শ করে। মোট ৬৬ রান যোগ করে জুটি ভাঙে।
১৯ বলে ২৫ রান করে চাহারের বলে আউট হন বেয়ারস্টো।
শেষ চার ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৪৬ রান। স্টোকস ও অধিনায়ক মরগানের ওপর ভরসায় এগিয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ড। তবে শার্দুল ঠাকুরের দুর্দান্ত এক ওভারে সেই ভরসা ভেঙে খান খান হয়ে যায়।
১৭তম ওভারে প্রথম দুই বলে দুজনকেই ফিরিয়ে দেন শার্দুল। ২৩ বলে ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৪৬ রান করেন স্টোকস।
শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার হয় ২৩ রান। খুব কঠিন হলেও টি-টোয়েন্টির জন্য অসাধ্য নয়।
এমন সমীকরণে লড়াই জমে ওঠে। চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে জয়ের আশা জিইয়ে রাখেন আরচার। শেষ ৩ বলে চাই ১০ রান।
চতুর্থ বলে আরচার নেন ১ রান। পরের বলে আউট হয়ে যান জর্ডান। শেষ বলে ব্যাট ছোঁয়াতেই পারেননি আরচার।
ফলে ১৭৭ রানে থেমে যেতে হয় সফরকারীদের। ৮ রানে জয় নিয়ে সিরিজে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত।
সর্বোচ্চ ৫৭ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে সূর্যকুমার যাদবের হাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ২০ ওভারে ১৮৫/৮ ( রোহিত ১২, রাহুল ১৪, সূর্যকুমার ৫৭, কোহলি ১, পন্ত ৩০, শ্রেয়াস ৩৭, পান্ডিয়া ১১, শার্দুল ১০*, সুন্দর ৪, ভুবনেশ্বর ০*; রশিদ ৪-১-৩৯-১, আরচার ৪-০-৩৩-৪, উড ৪-১-২৫-১, জর্ডান ৪-০-৪১-০, স্টোকস ৩-০-২৬-১, স্যাম কারান ১-০-১৬-১)
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৭৭/৮ (রয় ৪০, বাটলার ৯, মালান ১৪, বেয়ারস্টো ২৫, স্টোকস ৪৬, মর্গ্যান ৪, স্যাম কারান ৩, জর্ডান ১২, আরচার ১৮*, রশিদ ০*; ভুবনেশ্বর ৪-১-৩০-১, পান্ডিয়া ৪-০-১৬-২, শার্দুল ৪-০-৪২-৩, সুন্দর ৪-০-৫২-০, চাহার ৪-০-৩৫-২)
ফল: ভারত ৮ রানে জয়ী
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের সিরিজে চার ম্যাচ শেষে ২-২ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: সূর্যকুমার যাদব