বেয়ারস্টো-স্টোকসের তাণ্ডবে হারল ভারত

খেলাধুলা

স্বদেশবাণী ডেস্ক: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সমতায় ফিরলো ইংল্যান্ড। বেয়ারস্টো-স্টোকসের তাণ্ডবে একপর্যায় মনে হয়েছিল ৪০ ওভারেই ভারতের করা ৩৩৭ টপকে যাবে ইংলিশরা। কিন্তু পরপর দুই ওভারে স্টোকস, বেয়ারস্টো, বাটলারের উইকেট নিয়ে কিছুটা হলেও ম্যাচে ফেরে কোহলিরা। তবে স্টোকস-বেয়ারস্টো জুটি রানকে যে অবস্থায় রেখে যান তাতে লিভিংস্টোন-মালানের ব্যাটে খুব সহজে জয়ের বন্দরে পৌঁছে ইংল্যান্ড।

শুক্রবার পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ভারতকে ব্যাটে পাঠায় ইংল্যান্ড। লোকেশ রাহুলের সেঞ্চুরি, রিশাভ পান্তের ঝড়গতির ৭৭ ও বিরাট কোহলির ৬৬ রানের সুবাদে বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত। তাদের ছুড়ে দেয়া ৩৩৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ধীরগতিতে শুরু করলেও বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরি, স্টোকসের ৯৯ রানের টর্নেডো ইনিংস এবং জেস রয়ের ৫৫ রানের সুবাদে ৬.৩ ওভার আগেই ৬ উইকেটের জয় পায় ইংলিশরা।

ফলে তিন ম্যাচের সিরিজটি এখন ১-১ সমতায়। এর আগে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তিনশর ওপরে রান তাড়া করার রেকর্ড ছিল না ইংল্যান্ডের। জনি বেয়ারস্টো আর বেন স্টোকস জুটি ভারতকে দেখিয়ে দিল যে আমরাও পারি।

ওপেনিং জুটিতেই ভালো একটা সূচনা পেয়েছিল ইংল্যান্ড। ধীরগতিতে শুরু করলেও উইকেটে থিতু হয়েই মারতে শুরু করেন বেয়ারস্টো আর জেসন রয়। ফলে সাড়ে তিনের কম রানরেট নিয়ে প্রথম পাঁচ ওভার কাটানো ইংল্যান্ডই ১৬ ওভারে ১০০ পার করে সাড়ে ছয়ের কাছাকাছি রানরেটে।

১৭তম ওভারে অবশ্য দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হন জেসন রয়, ৫২ বলে ৫৫ রান করে। কিন্তু তাতে যেন ভারতীয় বোলারদের দুঃস্বপ্ন আরও ঘনীভূত হয়। দ্বিতীয় উইকেটে বেয়ারস্টো সঙ্গী হিসেবে পান বেন স্টোকসকে।

আর এই যুগল মিলেই ভারতীয় বোলারদের বেদম পেটাতে থাকেন। বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি তুলে নেন ৯৫ বলে। এতটাই মারমুখী ছিলেন, সেঞ্চুরির আগেও ভয় কাজ করেনি মনে। কুলদ্বীপ যাদবকে ছক্কা মেরেই তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান ইংল্যান্ডের এই মারকুটে ব্যাটসম্যান।

বেয়ারস্টো যখন সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন স্টোকস তখন ৩৪ বলে ৩৯ রানে। এরপরই শুরু হয় ইংলিশ অলরাউন্ডারের তাণ্ডব। একের পর এক বল আছড়ে ফেলতে থাকেন গ্যালারিতে। চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলে সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে পারতেন ৫২ বলেই। কিন্তু ভুবেনশ্বরের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১০ ছয় আর ৪ চারে ৯৯ রান করে যান স্টোকস। ফিফটির পর যিনি ১২ বলে তুলেছেন ৪৯ রান।

স্টোকস আউট হলেও তখন জয়ের জন্য দরকার ৮৮ বলে মাত্র ৫২ রান। এর মধ্যে ৩৭তম ওভারে সেঞ্চুরিয়ান বেয়ারস্টো (১১২ বলে ১১ চার আর ৭ ছক্কায় ১২৪) আর জস বাটলারকে (০) ফেরান প্রসিধ কৃষ্ণা। এতে ভারতীয় শিবিরে কিছুটা হলেও আনন্দের ঝিলিক দেখা দেয়।

কিন্তু সেই আনন্দ আর বাড়তে দেননি লিয়াম লিভিংস্টোন আর ডেভিড মালান। ৫০ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তারা। লিভিংস্টোন ২১ বলে ২৭ আর মালান ২৩ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

লোকেশ রাহুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আর বিরাট কোহলি ও রিশাভ পান্তের জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে ৬ উইকেটে ৩৩৬ রানের পাহাড় গড়েছিল ভারত।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। ৩৭ রানের মধ্যে আগের ম্যাচে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা শিখর ধাওয়ান (৪) আর রোহিত শর্মাকে (২৫) তুলে নেয় ইংল্যান্ড। কিন্তু অধিনায়ক বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, পান্তদের ব্যাট ইংলিশ বোলারেদের পাত্তা না দিয়ে সমানে চলতে থাকে।

তৃতীয় উইকেটে ১২১ রানের জুটি গড়েন কোহলি আর রাহুল। ৭৯ বলে ৬৬ রান করে কোহলি আদিল রশিদের শিকার হলে ভাঙে এই জুটি। এরপর রাহুল আরেকটি শতরানের (১১৩) জুটি গড়েন পান্তকে নিয়ে।

এরই মধ্যে রাহুল তুলে নেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১১৪ বলে ৭ চার আর ২ ছক্কায় ১০৮ রানের ইনিংস খেলে আউট হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে পান্ত রীতিমত তাণ্ডব চালিয়ে দলকে তিনশো পার করিয়েছেন।

৪০ বলে ৩ চার আর ৭ ছক্কায় পান্ত খেলেন ৭৭ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। এরপর ১৬ বলে ১ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় হার্দিক পান্ডিয়া ৩৫ রান করে ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে আউট হন।

ইংল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে দুটি করে উইকেট পান রিস টপলে আর টম কুরান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ৩৩৬/৬ (রোহিত ২৫, ধাওয়ান ৪, কোহলি ৬৬, রাহুল ১০৮, পান্ত ৭৭; হার্দিক ৩৫, ক্রুনাল ১২*, শার্দুল ০*; স্যাম ৭-০-৪৭-১, টপলি ৮-০-৫০-২, টম ১০-০-৮৩-২, স্টোকস ৫-০-৪২-০, মইন ১০-০-৪৭-০, রশিদ ১০-০-৬৫-১)।

ইংল্যান্ড: ৪৩.৩ ওভারে ৩৩৭/৪ (রয় ৫৫, বেয়ারস্টো ১২৪, স্টোকস ৯৯, মালান ১৬* বাটলার ০, লিভিংস্টোন ২৭*; ভুবনেশ্বর ১০-০-৬৩-১, প্রসিধ ১০-০-৫৮-২, শার্দুল ৭.৩-০-৫৪-০, কুলদিপ ১০-০-৮৪-০, ক্রুনাল ৬-০-৭২-০)।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন জনি বেয়ারস্টো। আগামী রোববার একই মাঠে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *