রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পাকিস্তানের জয়

খেলাধুলা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: টানটান উত্তেজনাকর ম্যাচে পাকিস্তানের জয়। টানা ১১ ম্যাচে পরাজয়ের পর জয়ের দেখা পেল সরফরাজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন দলটি। ৩৪৮ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়েও বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে পরাজয়ের শঙ্কায় ছিল পাকিস্তান। ইনিংসের শেষ দিকে ওয়াহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ আমিরের অভিজ্ঞ বোলিংয়ে সেই শঙ্কা কাটিয়ে ১৪ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান।

সোমবার ইংল্যান্ডের নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে স্বাগতিক ইংলিশদের বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৩৪৮ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যাওয়া দলকে খেলায় ফেরান জো রুট ও জস বাটলার। পঞ্চম উইকেটে তাড়া ১৩০ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান। চলতি বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সাজঘরে ফেরেন জো রুট।

রুটের বিদায়ের পর একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি করেন জস বাটলার। কিন্তু সেঞ্চুরির পরের বলে বাটলার আউট হলে ফের চাপের মধ্যে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। শেষ দিকে রান রেট বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত উইকেট পতনের কারণে তীরে গিয়ে তরী ডুবে ইংল্যান্ডের।

শেষ দিকে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৮ বলে ৩৮ রান। ওয়াহাব রিয়াজের করা ৪৮তম ওভারের প্রথম চার বলে ৮ রান নেয় ইংল্যান্ড। পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দেন মঈন আলী। ঠিক পরের বলে ক্রিস ওকসকে আউট করে সাজঘরে ফেরান ওয়াহাব।

পরপর দুই উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া ইংল্যান্ডের শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১২ বলে ২৯ রান। কিন্তু শেষ দিকে স্বীকৃত কোনো ব্যাটসম্যান না থাকায়, ওয়াহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ আমির গতির সামনে আদিল রশিদ-মার্ক উডরা অসহায় হয়ে পড়েন।

শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২৬ রান। ওয়াহাব রিয়াজের ওই ওভারে আদিল রশিদ-মার্ক উডরা ১০ রানের বেশি নিতে পারেননি। ১৪ রানের জয় পায় পাকিস্তান।

সোমবার বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে পাকিস্তান। দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে অনবদ্য ব্যাটিং করেন পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা।

উদ্বোধনী জুটিতে ১৪.১ ওভারে ৮২ রান করেন দুই ওপেনার ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে মঈন আলীর বলে স্ট্যাম্পিং হন ফখর জামান। তার আগে ৪০ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৩৬ রান করেন পাকিস্তানের এ ওপেনার।

এরপর ক্রিস ওকসের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন ইমাম-উল-হক। মঈন আলীর বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন পাকিস্তানের এ ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে ৫৮ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৪৪ রান করেন ইমাম-উল-হক।

তৃতীয় উইকেটে ব্যাটিংয়ে তাণ্ডব চালান বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ। এই জুটিতে তাড়া ৮৮ রান যোগ করেন। দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ফিফটি তুলে নেন বাবর আজম। পাকিস্তানের এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি তুলে নেয়ার পর মঈন আলীর তৃতীয় শিকারে পরিনত হন। তার আগে ৬৬ বলে ৪টি চার ও এক ছক্কায় ৬৩ রান করেন বাবর আজম।

চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে ৮০ রানের জুটি গড়েন হাফিজ। এই জুটিতে ক্যারিয়ারের ৩৮তম ফিফটি তুলে নেন সাবেক এ অধিনায়ক। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন হাফিজ। কিন্তু ৬২ বলে ৮টি চার ও দুই ছক্কায় ৮৪ রান করে আউট হয়ে ফেরেন তিনি।

এরপর সময়ের ব্যবধানে উইকেট হারায় পাকিস্তান। শেষ দিকে সরফরাজ আহমেদের ৪৪ বলে পাঁচটি চারের সাহায্যে গড়া ৫৫ রানের সুবাদে ৮ উইকেটে ৩৪৮ রান করে পাকিস্তান। ৩৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর তাড়া করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। শাদাব খান-ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিকের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয়কে সাজঘরে ফেরান শাদাব খান। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফিফটি তুলে নেয়া ইংল্যান্ডের এ ওপেনারকে মাত্র ৮ রানে ফেরান শাদাব। দলীয় ১২ রানে জেসন রয়ের উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যাওয়া ইংল্যান্ড খেলায় ফেরার আগে ফের বিপদে পড়ে। ওয়াহাব রিয়াজের গতির বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন জনি বেয়ারস্টো। আগের ম্যাচে শূন্য রানে আউট হওয়া এ ইংলিশ ওপেনার ফেরেন ৩১ বলে ৩২ রান করে।

চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি অধিনায়ক ইয়ন মরগান। মোহাম্মদ হাফিজের অফ স্পিনে বোল্ড হন তিনি। ১৮ বলে ৯ রান করেই সাজঘরে ফেরেন ইংলিশ অধিনায়ক।

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফর্ম করেন বেন স্টোকস। ৮৯ রান করার পাশাপাশি বল হাতে দুই উইকে শিকার করেন। ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ নিয়ে ম্যাচ সেরা হন। আগের ম্যাচে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখানো বেন স্টোকসকে উইকেটে সেট হওয়ার আগেই সাজঘরে ফেরান শোয়েব মালিক। তার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

দলীয় ১১৮ রানে জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, ইয়ন মরগান ও বেন স্টোকসের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন জো রুট-জস বাটলার। এই জুটিতে তাড়া ১৩০ রান করেন।

ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একাই লড়াই করেন ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক জো রুট। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯৭ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি। তবে সেঞ্চুরির পরই আউট হয়ে ফেরেন রুট। শাদাব খানের লেগ স্পিনের শিকার হওয়ার আগে ১০৪ বলে ১০টি চার ও এক ছক্কায় ১০৭ রান করেন রুট।

জো রুটের বিদায়ের পর লড়াই চালিয়ে যান জস বাটলার। মোহাম্মদ আমিরকে বাউন্ডারি হাঁকানোর মধ্য দিয়ে ৭৫ বলে শতরান পূর্ণ করেন বাটলার। বিশ্বকাপের চলমান আসরে জো রুটের পর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন তিনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাটলারের এটা নবম সেঞ্চুরি।

সেঞ্চুরির করার পর ঠিক পরের বলেই ক্যাচ তুলে দেন বাটলার। আমিরের গতির বলে ওয়াহাব রিয়াজের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ৭৬ বলে ৯টি চার ও দুটি ছক্কায় ১০৩ রান করেন বাটলার। শেষ দিকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের কারণে তীরে গিয়ে তরী ডুবে ইংল্যান্ডের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (হাফিজ ৮৪, বাবর ৬৩, সরফরাজ ৫৫, ইমাম-উল ৪৪, ফখর জামান ৩৬, আসিফ আলী ১৪; মঈন আলী ৩/৫০, ক্রিস ওকস ৩/৭১ মার্ক উড ২/৫৩)।

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৯ (জো রুট ১০৭, বাটলার ১০৩, বেয়ারস্টো ৩২; ওয়াহাব রিয়াজ ৩/৮২, আমির ২/৬৭, শাদাব খান ২/৬৩)।

ফল: পাকিস্তান ১৪ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান)।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *