কারো মোবাইলে অশ্লীল বা ভূয়া তথ্য পাঠালে সাইবার অপরাধ হবে না

তথ্যপ্রযুক্তি লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: কারো মোবাইল থেকে সংক্ষিপ্ত মেসেজ সার্ভিসে (এসএমএস) অশ্লীল বা ভূয়া তথ্য পাঠালে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর অধীন সাইবার অপরাধ হবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো বার্তা ইলেকট্রনিক প্রকাশনা বা প্রেরণ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই রায় দিয়েছেন। রায়টি গত ৭ নভেম্বর প্রকাশ হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (আইসিটি) এর ৫৭ ধারায় করা একটি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কতুবুল আলম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনিস হোসেন প্রধানের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছিলেন ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট। ইউএনও কতুবুল আলমের অভিযোগ ওই শিক্ষক তার সম্পর্কে অবমাননাকর ও মানহানিকর মন্তব্য করে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছে এসএমএস পাঠিয়েছিলেন। অন্যদিকে শিক্ষকের বক্তব্য ইউএনও’র দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে এসএমএসটি পাঠিয়েছেন তিনি।

হাইকোর্ট রায়ে বলেন, আইসিটি ৫৭ ধারার অধীন কোন ব্যক্তিকে ভূয়া তথ্য বা অশ্লীল উপাদান (কন্টেন্ট) অবশ্যই ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশ হতে হবে। এই ধারায় অপরাধ বলে গণ্য হবে যদি কেউ ওয়েবসাইটে বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ভূয়া বা অশ্লীল তথ্য প্রকাশ করে। রায়ে বলা হয় সাধারণত প্রকাশনা বলতে বোঝায় যখন তথ্য বা গল্প তৈরি করে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

রায়ে আরো বলা হয়, অনলাইন প্রকাশনা হবে যখন এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচারিত কোন কাজ হয় বা প্রচারিত হয়েছে। আর কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রচার হলো যোগাযোগ চ্যানেলে তথ্য প্রেরণ।

হাইকোর্ট বলেন, যদি রিট আবেদনকারী (শিক্ষক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ইউনএনও’র বিরুদ্ধে মোবাইল ফোন থেকে এসএমএস’র মাধ্যমে অশ্লীল বা ভূয়া তথ্যের বার্তা পাঠিয়েও থাকেন তা আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় অপরাধ হবে না। কারণ বার্তাটি কোন ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রিক মাধ্যমে প্রকাশ বা প্রেরণ করা হয়নি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো দায়িত্বশীল পদে থেকেও ইউএনও অন্য কোন আইনি প্রতিকারের আশ্রয় না নিয়ে একটি বিশেষ আইনে মামলা করেছেন।

এ মামলায় ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর গ্রেফতারের পর ওই শিক্ষক জামিন আবেদন করলে একই বছরের ১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন। পরে তিনি হাইকোর্টে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। এ রিটের রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিলেন হাইকোর্ট।

আদালতে রিট আবেদনকারী শিক্ষকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান রাজিব প্রধান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াসমিন বেগম বিথী। মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে।

প্রসঙ্গত, আইসিটি আইন কার্যকর থাকা অবস্থায় বিতর্কিত ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে বেশি। মোট মামলার ৯০ শতাংশ মামলা দায়ের হয়েছিল এ ধারায়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *