মহাকাশে যাওয়ার ফ্লাইটের উদ্বোধন হবে এবছর

তথ্যপ্রযুক্তি লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: একষট্টি-বছর বয়সী কেটি মেইজনরুজ একটি বিজনেস স্কুলের প্রফেসর। ২০০৫ সালে আড়াই লাখ ডলার দিয়ে মহাকাশে যাওয়ার জন্য টিকেট কাটেন। অর্থের বিনিময়ে এরকম মহাকাশ ভ্রমণের টিকেট বিক্রি করছিল ভার্জিন গ্যালাকটিক। তাদের প্রথম যে ফ্লাইট মহাকাশে যাবে, সেটিতে থাকবেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন।

ভার্জিন গ্যালাকটিক বলছে, শেষ পর্যন্ত তাদের মহাকাশ ফ্লাইটের উদ্বোধন হবে এবছরই। মিসেস মেইসনরুজ আশা করছেন, তাদের মহাকাশ ভ্রমণটি হবে এক চমৎকার অভিজ্ঞতা।

সবকিছু ঠিকঠাক চললে ভার্জিন গ্যালাকটিক হবে প্রথম কোন বেসরকারি কোম্পানি যারা পর্যটকদের মহাকাশে নিয়ে যাবে। এ পর্যন্ত ৬০০ লোক তাদের মহাকাশ ভ্রমণের টিকেট কিনেছে। এদের মধ্যে জাস্টিন বিবার এবং লিওনার্ডো ডিক্যাপ্রিওর মতো সেলিব্রেটিও আছে।

তবে ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোও পিছিয়ে নেই। আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের কোম্পানি ‘ব্লু অরিজিন’ আশা করছে তাদের মহাকাশ ফ্লাইটও এবছরই শুরু হবে।

আর টেসলার প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এরই মধ্যে ঘোষণা করেছেন যে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে তাদের স্পেস এক্সের ফ্লাইটের প্রথম যাত্রী হবেন একজন জাপানি ধনকুবের।

মহাকাশের স্বপ্ন

দু’হাজারউনিশ সালে সুইস ব্যাংক ইউবিএস একটি রিপোর্টে অনুমান করেছিল যে আগামী দশ বছরে মহাকাশ পর্যটন ৩০০ কোটি ডলারের ব্যবসায় পরিণত হবে।

ভার্জিন গ্যালাকটিকের মহাকাশ ভ্রমণের টিকেট একেবারে শুরুতে যারা কেটেছিলেন, মিসেস মেইসনরুজ তাদের একজন। টিকেটের দাম আড়াই লাখ ডলার হওয়া সত্ত্বেও তা কেনার মতো লোকের অভাব ছিল না।

খুব অল্প বয়স থেকেই মিসেস মেইসনরুজ মহাকাশের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি এখনো পরিস্কার মনে করতে পারেন ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন যখন প্রথম চাঁদে পা রাখেন।

ভার্জিন গ্যালাকটিক যখন প্রথম ঘোষণা করলো যে তারা মহাকাশে সাধারণ পর্যটকদের নিয়ে যাবে, তখন সাথে সাথে তার টিকেট বুক করেন মিসেস মেইসনরুজ।

তবে মহাকাশে যাওয়ার টিকেট কাটলেও এই পরিকল্পনা বেশ গোপনই রেখেছিলেন তিনি। কেবল তার পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাই জানতেন তার মহাকাশে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা।

পর্যটকদের প্রথম যে দলটি মহাকাশে যাবে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে তারা প্রথম তাদের ‘স্পেসস্যুট’ পরার সুযোগ পান। এই স্পেসস্যুট ডিজাইন করেছে স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড ‘আন্ডার আর্মার।’

‘আমার জন্য তখন ব্যাপারটা ছিল এমন, এটি তাহলে সত্যিই ঘটতে চলেছে”, বললেন মিসেস মেইসনরুজ। “আপনি যখন ১৫ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন, আপনি যখন এত বছর ধরে এই স্বপ্ন দেখছেন, তখন যতক্ষণ ব্যাপারটা না ঘটছে, ততক্ষণ আপনার মনে হতে থাকে, এটা কি সত্যিই ঘটবে?

অ্যাপোলো মিশনের নভোচারীদের যেখানে মাসের পর মাস কঠোর প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে, সেখানে মিসেস মেইসনরুজ এবং তার সহযাত্রী পর্যটকদের দেয়া হবে মাত্র তিন দিনের প্রশিক্ষণ। ভার্জিন গ্যালাকটিক বলছে, প্রশিক্ষণের সময় এর চেয়েও কম হতে পারে। মহাকাশযাত্রীরা যেন তাদের এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেন, সেটা বুঝিয়ে দেয়াই হবে এই প্রশিক্ষণের লক্ষ্য।

এই মহাকাশ পর্যটকরা এরই মধ্যে নিউ মেক্সিকোর মরুভূমিতে ‘স্পেসক্রাফট আমেরিকায়’ ভার্জিন গ্যালাকটিকের টার্মিনাল পরিদর্শন করেছেন।

এখান থেকেই পর্যটকরা ভার্জিন গ্যালাকটিকের স্পেসশিপে আরোহন করবেন। তাদের নিয়ে স্পেসশীপটি ৯০ মিনিট আকাশে থাকবে। এরমধ্যে তারা পৃথিবীর কক্ষপথে থাকবেন মাত্র কয়েক মিনিট।

এরকম নব্বুই মিনিটের একটি ভ্রমণের জন্য আড়াই লাখ ডলার অনেক বেশি মনে হতে পারে, কিন্তু ভার্জিন গ্যালাকটিক বলছে, তাদের স্পেস ফ্লাইটের জন্য চাহিদা বাড়বে বলেই মনে করছে তারা।

রাশিয়ার সয়ুজ স্পেসফ্লাইটের জন্যও কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করে টিকেট কেটেছে সাতজন ব্যক্তিগত অভিযাত্রী।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থাও এরকম পথে যাচ্ছে। তারা স্পেসএক্স এবং বোয়িং এর সঙ্গে চুক্তি করেছে তাদের নভোচারীদের মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

তবে শুধু মহাকাশে যাওয়ার জন্যই নয়, পৃথিবীরই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় দ্রুত যাওয়ার জন্য পৃথিবীর কক্ষপথ ব্যবহারের পরিকল্পনা চলছে। স্পেসএক্স নিউ ইয়র্ক থেকে মাত্র ৪০ মিনিটে সাংহাই পৌঁছানো যায় এমন এক ফ্লাইটের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। তারা স্পেস ফ্লাইটের প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, যেখানে আসলে স্পেসশিীপটি পৃথিবীর নীচু কক্ষপথ ব্যবহার করে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাবে।

সুইস ব্যাংক ইউবিএস এর মতে, ২০৩০ সাল নাগাদ এটি হবে দু হাজার কোটি ডলারের ব্যবসা। সূত্র: বিবিসি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *