বিএনপি চেয়েছিল জাতীয় পার্টি যেন ধ্বংস হয়ে যায়: জিএম কাদের

রাজনীতি

স্বদেশবাণী ডেস্ক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিয়েছে।

জিএম কাদের আরও বলেন, জাতীয় পার্টির শাসনামলে দুর্নীতি ছিল না, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ছিল না, ক্ষমতার অপব্যবহার ছিল না। গেল ত্রিশ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের চেয়ে জাতীয় পার্টির শাসনামলে সুশাসন বেশি ছিল। জাতীয় পার্টির আমলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছিল, তাই নেতাকর্মীরা বুক ফুলিয়ে কথা বলতে পারে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

জিএম কাদের বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতি চালু করেছে। সংবিধান সংশোধন করে তারা ৭০ ধারা যোগ করেছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যে দল সরকার গঠন করে সেই দলের প্রধানই হন সংসদীয় দলের প্রধান এবং সরকারপ্রধান। আর ৭০ ধারার কারণে কোনো সংসদ সদস্য দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না। তাই সরকারদলীয় প্রধান যা চান তাই সংসদে পাস হয়। আবার সরকারপ্রধান যা চান না তা সংসদে পাস হয় না। এতে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে এবং সরকারের জবাবদিহিতা থাকে না। নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতায় দুর্নীতি বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোট ৫ বার বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি গেল ৩০ বছর ধরে ৭০ ধারা অপব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা ভোগ করেছে। সংসদ যেখানে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে সেখানে সরকারই সংসদকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কোনো পথ আর নেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ডাক-চিৎকার করছে। কিন্তু বিএনপি কি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়েছে কখনও? বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মহাসচিবরা প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে বাহাস করেন। কিন্তু দুই দলই গণতন্ত্রের হাতে হাতকড়া পরিয়ে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক স্বাদ নষ্ট করেছে।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি গণমানুষের দল। ’৯১ সালের নির্বাচনে দেশের সরকার, প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সবকিছুই জাতীয় পার্টির বিপক্ষে ছিল। নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে প্রচার চালাতে দেয়া হয়নি। নেতাকর্মীদের জেলে পাঠিয়ে অবিচার করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। সেই অবস্থাতে দেশের জনগণ জাতীয় পার্টিকে ৩৫টি আসনে নির্বাচিত করেছে। পল্লীবন্ধু দুইবার পাঁচটি করে আসনে নির্বাচিত হয়ে প্রমাণ করেছেন জাতীয় পার্টি শুরু থেকেই জনগণের রাজনৈতিক শক্তি। বিএনপি ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি। তারা চেয়েছিল জাতীয় পার্টি যেন ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় এখনও টিকে আছে আমাদের পার্টি। আগামী দিনের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি অনেক সম্ভাবনাময় দল। জাতীয় পার্টিকে ছাড়া কেউই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারছে না।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, গেল ১০ থেকে ১২ বছরের যে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে তার কৃতিত্ব ধরে রাখা যাবে না- যদি প্রকৃত গণতন্ত্র না থাকে। এখন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির শাসনামলে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। এখন নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ সবাই জানে নির্বাচনের ফল কী হবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির শাসনামলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উন্নয়নের যে ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন, ’৯১ সালের পর থেকে সেই ভিত্তির ওপরেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ২০২০ সাল শুধু করোনাকাল নয়, সালটি নারী ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বছর। তিনি বলেন, দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল গণতন্ত্রের জন্য, বাক-স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য। উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে, তারা পরিবর্তন চায়। তারা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির শাসনামল ফিরে পেতে চায়। খুন, গুম, দুর্নীতি, দুঃশাসন, অন্যায় আর অবিচার থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে আগামী নির্বাচনে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির সরকার গঠন করতে হবে।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের পার্টি এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। যারা জাতীয় পার্টির অনৈক্য নিয়ে গল্প করেছেন তাদের বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণ করে পার্টি দুর্বার বেগে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *