বাবার কিছু হলে দায় প্রশাসনের: গুলিবিদ্ধ হাবিব-উন নবী সোহেলের মেয়ে

রাজনীতি

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল। এমন দাবি করে তার মেয়ে জান্নাতুল ইলমি সূচনা বলেছেন, সেদিন নেতাকর্মীদের বাঁচাতে পুলিশের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিলেন বাবা। সামনে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় আহত হন তিনি। এ সময় পুলিশের বুলেট তার পিঠে এসে লেগেছে।

হাবিব-উন নবী খান সোহেল এখন রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরে গুলি লাগার স্থানে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, ইনফেকশন হয়ে গেছে।  এমতাবস্থায় বাবার কিছু হলে দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে হুশিয়ার করেন সোহেলকন্যা ইলমি।

হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরানো বাবার পাশে বসে ফেসবুকে দেওয়া আবেগঘন একটি স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন সূচনা।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত ইলমি গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে হামলা করার জন্য প্রশাসনকে দুষছেন।

ইলমির স্ট্যাটাসটি পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো—

‘রাত ঘনিয়ে আসছে…

ঘুমিয়ে পড়েছে ক্লান্ত বাবা। প্রেসক্লাবের সেই ভয়াবহ সংঘর্ষে সবাইকে পুলিশি হামলা থেকে বাঁচাতে সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল যে ৬ ফুট মানুষটি। সাহস, ক্ষিপ্র বুলেটে ছারখার হয়ে গেছে তার পিঠ… কী অদ্ভূত, বাবা বুঝতেও পারেননি।
তাড়াহুড়াতে কোনোরকম সেলাই করে দিয়েছিল সেদিন ডাক্তাররা। কিন্তু প্রতিদিন রক্তক্ষরণ হতো, হাসপাতালে ড্রেসিং করে বাবা মিটিংয়ে যেতেন, তারপর আবার রক্তমাখা শার্ট নিয়ে ঘরে ফিরতেন। আমাদের সন্দেহ হলো, কেন রক্ত বন্ধ হচ্ছে না।
পরে জানা গেল, সেদিনের বুলেট ভেতরে গিয়ে বাজে ইনফেকশন করে ফেলেছে… এখন বাবা হাসপাতালে ভর্তি, অপারেশন করে তা বের করেছে।  কিন্তু সেলাই করা যাচ্ছে না। কারণ ক্ষত শুকাতে অনেক সময় লাগবে, আর বাবার ডায়াবেটিস। তাই কাটা পিঠটা খোলা-ই আছে, ভেতরে গজ দেওয়া…।
এই প্রথম ব্যথায়-যন্ত্রণায় আমরা আমাদের বাবাকে প্রচণ্ড কষ্ট পেতে দেখেছি, মুখে তবু হাসি। আগের গুলি খাওয়া জায়গাতেই আবার ক্ষত। আমাদের দুই বোনের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ যদি দেখানো যেত… মা সারারাত নিষ্পলক বসে থাকেন বাবার পাশে।
কোনো ক্ষতি হলে দায়ভার অবশ্যই প্রশাসনের… সবাইকে রক্ষা করতে গিয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের সেই মেধাবী তরুণ তার সারাজীবন জাতীয়তাবাদকে উৎসর্গ করে গেল… আজও সে আপনাদের কথা ভাবে, দেশকে নিয়ে ভাবে। সবাই আমাদের বাবার জন্য দোয়া করবেন।
যারা সোহেলের সুস্থতা কামনা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি সূচনা। লিখেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা কষ্ট করে আসছেন দেখতে, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।  কাঁচা অপারেশনে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাই কাছে যেতে দিতে পারছি না বলে দুঃখিত।

এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার দিন আহত সোহেলের একটি ছবি দিয়ে নিন্দা জানান সূচনা। সেদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন—

‘আর কত রক্ত ঝরালে আমাদের কথা বলতে দেবে?

কত লাশের বিনিময়ে একটু স্বাধীন অনুভূতি পাবো?
সবাইকে পরিবারসহ এক কাতারে দাঁড় করিয়ে মেরে ফেলেন আপনারা, এটিই বাকি এখন …
বাবা,
আমি জানি তুমি আজন্ম বীর। তোমার মনোবল আকাশছোঁয়া। তুমি এক ছয় ফুট ইতিহাস। শুধু এটুকুই জানতে চাচ্ছে আমাদের দুই বোনের ছোট্ট মন…
‘ঠিক আছো?’
প্রেসক্লাবের সামনে রণক্ষেত্র…।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *