বাগমারায় সশস্ত্র  মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যক্ষ আত্মগোপনে কলেজ তালাবদ্ধ 

রাজশাহী শিক্ষা
বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর  বাগমারায় সশস্ত্র  মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া সেই অধ্যক্ষ আত্মগোপনে রয়েছেন। কলেজ তালাবদ্ধ, শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ  রয়েছে।  উপজেলার পানিয়া নরদাশ ডিগ্রি কলেজর  অধ্যক্ষ গোলাম সারোওয়ার আবুল একাধারে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পানিয়া নরদাশ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এবং নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।    শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও  স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫  আগস্ট থেকে অদ্যাবধি কলেজে  অনুপস্থিত রয়েছেন তিনি ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে কলেজের মূল ফটকে নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। নোটিশের মূল প্রতিপাদ্য ছাত্র আন্দোলনে গুলিছোড়া পলাতক অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্লাশ বন্ধ থাকবে।
শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধে অদ্বিগ্ন অভিভাবক, শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মহল। সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোওয়ার আবুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র ক্যাড়াররা মহড়া দেয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ধাওয়া দিয়ে  মারধর ও পায়ে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে।
৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, অধ্যক্ষ গোলাম সারোওয়ার আবুল মিছিলের মধ্যভাগ থেকে অস্ত্রধারীদের নানা ভাবে উৎসাহিত করছেন। (এই প্রতিবেদকের কাছে ভিডিও ক্লিপটি  সংরক্ষিত)।
বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগ মূলত দু’টি গ্রুপে বিভক্ত। এক গ্রুপের প্রধান সাবেক এম. পি এনামুল হক, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। অপর গ্রুপের প্রধান আবুল কালাম আজাদ,  তিনি সাবেক মেয়র,  এম. পি এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ।
নমিনেশন প্রাপ্তির পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত গোলাম সারোওয়ার আবুল ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের অন্ধ ভক্ত ছিলেন। নিয়েছেন সকল সুযোগ, সুবিধা। পরবর্তীতে আবুল কালাম আজাদ নমিনেশন পেলে তাঁর কাছে ভিড়তে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি।
তিনি মূলত সব সময়  ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলেন।
সূত্রে জানা গেছে,  তিনি প্রদর্শক থেক প্রভাষক তারপর প্রভাষক থেকে অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অধ্যক্ষ অন্তত ৩০ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রায় ৪/৫ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি নিয়োগে গোপনে তাঁকে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হয়। আর ১০/১২ লক্ষ টাকা প্রকাশ্যে নিয়ে থাকেন। এর পরেও কলেজ ফান্ড প্রায় শূন্য বলে সূত্র জানিয়েছে। একজন আয়াকে সুকৌশলে কলেজ থেকে বিতাড়িত করেছেন তিনি।
না প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, প্রমোশনের ক্ষেত্রেও অধ্যক্ষকে ৫০ হাজর থেকে ১ লক্ষ টাকার উৎকচ দিতে হতো।
শিক্ষক সহ স্টাফদের সাথে অসদাচরণ করতেন। প্রকাশ্য কলেজ মাঠে শিক্ষার্থীকে জুতো পেটা করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও রাজনৈতিক নাম, পদ, পদবী ব্যবহার করে একচ্ছত্র রাজত্ব কায়েম করেন এই আওয়ামীলীগ  নেতা। ভোট কেন্দ্র দখলের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তাঁর রয়েছে পেটোয়া বাহিনী। কেউ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধাচার করলে নরদাশ বাজারে তাকে লাঞ্চিত, মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে বহুবার।
সরজমিন নরদাশ এলাকায় উপস্থিত হলে বৃহস্পতিবার মূল ফটক খোলা থাকলেও প্রশাসনিক ভবন,  অধ্যক্ষের রুম, এবং শ্রেণি কার্যক্রম  বন্ধ ছিল।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামীতে ক্লাশ ও অন্যান্য কার্যক্রম চালাতে তারা সহযোগিতা করবেন। তবে অধ্যক্ষের কক্ষে তালাবদ্ধ রাখবেন।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ গোলাম সারোওয়ার আবুল স্থায়ী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।
মুঠোফোনে অধ্যক্ষ গোলাম সারোওয়ার আবুলের  কাছে কলেজে অনুপস্থিত সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলেজ তালাবদ্ধ। আমাকে তো কলেজে ডুকতে দেয়া হয়নি। সশস্ত্র মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্ধে বলেন, চেয়ারম্যান হিসাবে উপজেলায় গিয়েছিলাম। স্টলে চা পান করছিলাম। এ সমন্ধে কিছু জানি না।  মিছিলে যাওয়ার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
শিক্ষা ব্যবস্থার  স্থবিরতা সমন্ধে জানতে কল করলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম জানান, এ সসন্ধে আমি অবগত নই। ব্যক্তির উপর  কারও  ক্ষোভ থাকতে পারে। কলেজ বন্ধ রাখা তো ঠিক হবে না। তবে তিনি খোঁজ নিবেন। শেষের দিকে বলেন, একটি পক্ষ মনে হয়  ওই কলেজ বিষয়ে কথা বলে গেছেন ।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *