তানোরে বিনা ভোটের চেয়ারম্যানের শপথ নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা 

রাজশাহী
তানোর প্রতিনিধি: ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হয়,ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা।  দায়িত্ব গ্রহণ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন বাংলাদেশ গঠনে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করেন। কিন্তু নতুন দেশ গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন সবকিছুই সংস্কারের পরিকল্পনা করছেন। ঠিক এসময় জশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির উপনির্বাচনে বিনা ভোটের চেয়ারম্যান ইউপি আ”লীগের সম্পাদক সুফি কামাল মিন্টুর শপথ অনুষ্ঠান হয়। ফলে দেশের এমন পরিস্থিতিতে শপথ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন, বইছে সমালোচনার ঝড়। কিভাবে শপথ হয়, কিসের বিনিময়ে হয় এমন প্রশ্ন জনসাধারণের।
জানা গেছে, বিগত ২০২১ সালের কামারগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ ইউপির চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউপি আ”লীগ সভাপতি ফজলে রাব্বি ফরহাদ নির্বাচিত হন। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল ফরহাদ মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার কারনে পদটি শুন্য হয়। গত জুন মাসের শেষের দিকে কামারগাঁ ইউনিয়ন ইউপির উপনির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল ৪ জুলাই। মনোনয়ন ফরম জমা দেন তিনজন। তারা হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ”লীগ নেতা মসলেম আলী প্রামানিক, ইউপি আ”লীগ সম্পাদক সুফি কামাল মিন্টু ও হঠাৎ আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়া মাসুদ করিম। যাচাই বাছাইয়ে এতিন প্রার্থী বৈধতা লাভ করে। কিন্তু প্রত্যাহারের দিন ১০ জুলাই রহস্য জনক কারনে ও সাবেক এমপি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সহ শীর্ষ নেতাদের হুমকিতে মসলেম ও মাসুদ করিম প্রত্যাহার করে নেয়। ১০ জুলাই বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হয়ে শোডাউন থেকে শুরু করে মিষ্টি খাওয়ানোর ধুম ফেলে দেয়  সুফি কামাল মিন্টুসহ তার অনুসারীরা । ওই দিন দিবাগত রাতে সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর রাজশাহীর বাস ভবনে মিন্টু সহ নেতারা মাইক্রো বাস যোগে গিয়ে সংবর্ধনা দেন। সেখান থেকে ফেরার পথে লবিয়তলা ব্রীজ সংলগ্ন সড়ক দূর্ঘটনায় মাইক্রো বাস চালকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ১১ জুলাই প্রতীক বরাদ্দ হয়। ২৭ জুলাই ভোট গ্রহণের দিন ছিল। কিন্তু কোটা সংস্কারের আন্দোলনের কারনে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
অথচ ১১ জুলাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সুফি কামাল মিন্টুকে বিনা ভোটের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে গ্যাজেট ঘোষনা করেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। হঠাৎ গত ২৭ আগস্ট বিনা ভোটের চেয়ারম্যান সুফি কামাল মিন্টু শপথ গ্রহণ করে  নির্বাচন অফিসারকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দিতে এসে তোপের মুখে পালিয়ে যায়। অবশ্য স্বৈরাচারের পতন হলেও তার দোসরেরা বহাল তবিয়তে থাকার কারনেই দেশের এপরিস্থিতিতে শপথ হয় বলে মনে করেন ইউপি বাসী। তিনজন মনোনয়ন ফরম জমা দেয়, যাচাই বাছাইয়ে তিন জনই বৈধতা পায়। আবার দুজন প্রত্যাহার করে নেয়। সবকিছুই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নার নির্দেশে নির্বাচন কর্মকর্তা এসব ঘটনার জন্ম দেন।
সুত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সে সুবাদে নির্বাচন কর্মকর্তার যোগসাজশে স্থগিত হওয়া নির্বাচন কে তিনি বৈধতা দিয়ে দ্রুত শপথ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেন। ২৭ জুলাই শপথ গ্রহণ করে পরদিন বুধবারে ইউনিয়ন পরিষদ ইউপির চেয়ারে বসেন মিন্টু ।  ইউপি বাসী খবর পেয়ে মিন্টুর অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করলে পিছন দিক দিয়ে পালিয়ে যায় রক্ষা পায় মিন্টু । উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, কোন প্রার্থী না থাকার কারনে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হওয়ায় গ্যাজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। একারনে তার শপথ হয়েছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে কিভাবে শপথ হয় জানতে চাইলে তিনি জানান গ্যাজেট হলে শপথ হবে এটাই স্বাভাবিক।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামিম আহম্মেদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন গ্যাজেট প্রকাশ কিভাবে করেছে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার কারনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবিষয়ে তিনি ইসি বা রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে গত বৃহস্পতিবার বিতর্কিত ইসি হাবিবুল আওয়াল ও নির্বাচন কমিশানারেরা একযোগে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ করে নির্বাচন অফিস থেকে  বের হওয়ার সাথে সাথে ভূয়া ভূয়া স্লোগান দিয়ে তাদের গাড়িতে ডিম টমেটো নিক্ষেপ করেন। আর ডিসি মহোদয় কিভাবে ইসির সাথে কথা বলতে বলেন এটাই বড় প্রশ্ন।
সম্প্রতি সুফি কামাল মিন্টুর বিরুদ্ধে কামারগাঁ জামে মসজিদ ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রায় ৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মজসিদ কমিটির সভাপতি সম্পাদক ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *