বাগমারায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

রাজশাহী লীড

নুর কুতুবুল আলম, বাগমারা (রাজশাহী): রাজশাহীর বাগমারায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে।  যত্রতত্র অবাধে ঘুরে বেড়ায় এসব বেওয়ারিশ কুকুরগুলো। দলবেঁধে বিচরণ  কুকুরগুলোর। অনেক সময় বেওয়ারিশ কুকুরগুলো হাঁস, মুরগীর ছানা মুখে নিয়ে দৌড় দেয়। এমন কী গরু, ছাগলের বাচ্চা মেরে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, মাদ্রাসা,  স্কুলগামী শিশুদের ঘেউ ঘেউ করে তাড়া করে। শিশুরা কুকুরের ভয়ে বাড়ী থেকে বের হতে চায় না । বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল আরোহীদের তাড়া করতে দেখা যায়।

বেওয়ারিশ কুকুরগুলো মাংস ও মিষ্টি পট্রিতে বেশী ঘুর ঘুর করে থাকে । মাংশের উচ্ছিষ্ট, ছানার পানি চাটতে দেখা যায়। ব্রয়লার মুরগী যেখানে ক্রয় বিক্রয় হয় সেখানে ভিড় জমায়। ছিলানো মুরগীর নাড়িভুঁড়ি নিয়ে কাড়াকাড়ি করে।
পূর্বে গৃহস্থরা বাড়ীতে শিকারি কুকুর পোষতেন। চোর ও শিয়ালের হাত থেকে সম্পদ ও পশু পাখী রক্ষা করতে কুকুর পোশতেন।

সময়ের বিবর্তনে গ্রামে তেমন কেউ আর কুকুর পোষেন না। খাবারের অভাবে দিন দিন হিংস্র হয়ে উঠছে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো।

এখন কুকুরের প্রজনন মাস হওয়ায় বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব দ্বিগুণ হয়েছে। রাস্তা ঘাটে মাদি কুকুরের পিছনে একাধিক কুকুর লাইন ধরে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় শাখা রাস্তা এমন কী মহাসড়কেও কুকুরের আনাগোনা অনেক বেশী । বিশেষ করে সকাল, সন্ধা ও ভোরে মহাসড়কের মধ্যে কুকুরগুলো মরার মত পড়ে থাকে। বর্তমানে কুকুরগুলো ছোটখাটো দুর্ঘটনার কারণ।
শুধু কুকুরের উপদ্রব নয়, গ্রাম গঞ্জে শিয়াল ও পাগলা শিয়ালের উপদ্রব বেড়েছে। গত কয়েকদিন আগে উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের বেলঘরিয়াহাট গ্রামে তিনজনকে পাগলা শিয়ালে আক্রমণ করে। এদের মধ্যে ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুমের পায়ে কামড়িয়ে ক্ষত বিক্ষত করে। মাসুম বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিশেধক গ্রহণ করে। মাসুমের পিতা- মাতার জানায়, দুই ডোজ দেয়ার পর ভ্যাকসিন নেই বলে জানানো হয়।
এই প্রতিবেদক, বাগমারা উপজেলা  পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে দেন।

পার্শ্ববর্তী সাঁইধারা গ্রামে এক ব্যক্তিকে শিয়ালে আক্রমণ করে। তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন। শিয়ালও ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে কামড়ায়। একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুই-তিন ডোজ দেয়ার পর  আশপাশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বলা হয় ভ্যাকসিন শেষ। তখন রোগীর স্বজনরা প্রায় ৪/৫ শ টাকায়  জলাতঙ্কের প্রতিটি ভ্যাকসিন ক্রয়ে বাধ্য হন।

আশপাশের উপজেলা মান্দার সাবাইহাট, দেলুয়াবাড়ী, মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট, মৌগাছী, বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর, হাটগাঙ্গোপাড়া, মাদারীগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, মচমইল হাটে কুকুরের আনাগোনা ও উপদ্রব বেশী।  উপজেলার  তাহেরপুর পৌর এলাকার কলেজ রোডের মন্দিরের পাশে একঝাঁক কুকুর দেখে পথচারীরা থমকে দাঁড়ান। ভ্যান ও সিএনজি থামাতে বাধ্য হন চালক। কুকুরের অবাধ বিচরণ দেখে অনেকে নানা মন্তব্য করতে থাকেন।

কিছু দিন আগে বেলঘরিয়া হাট ফাযিল মাদ্রাসার গণিত বিভাগের  সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌস রহমানের  মোটরসাইকেলের সাথে জড়িয়ে তাঁর পায়ে কুকুরের নোখের আঘাত লাগে। রক্তক্ষরণ না হওয়ায়  তাঁকে ভ্যাকসিন নিতে হয়নি।

যদিও কুকুরগুলো মরা, পচা খাবার খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য কিছুটা রক্ষা করে থাকে।  অভিজ্ঞজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রজনন মাসে জন্ম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কুকুরের বংশ বিস্তার কিছুটা রোধ করা যেতে পারে।

সূত্রে জানা গেছে, পূর্বে কুকুর নিধনের অভিযান চালানো হতো। জীব ও বৈচিত্র্য সংরক্ষণের কারণে মহামান্য  হাইকোর্ট থেকে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলামকে অবহিত করলে তিনি বলেন, পশু সম্পদ অফিসারকে জানিয়ে বিষয়টির  কিছু করা যায় কিনা দেখবো।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *