মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ট্রাম্প-কমলার ভাগ্য নির্ধারণ আজ

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নির্বাচনে ভোট দিতে অনীহা আছে মার্কিন জনগণের। কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট পেপারে সিল মারার বিষয়টি এক-চতুর্থাংশ মার্কিনির পছন্দ নয়। তাঁরা ঘরে বসেই টেলিভিশনে ভোটরঙ্গ দেখতে ভালোবাসেন। কিন্তু তাঁদের এই বসে থাকা নিয়ে যত ভয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের। একটি ভোট নিজের পক্ষে না পড়া মানেই প্রতিপক্ষের অবস্থান একটু শক্ত হওয়া সেটা তাঁরা জানেন। তাই ৫ নভেম্বর কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য দেশের নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে দল দুটি যারপরনাই পরিশ্রম করে চলেছে।

আজ সকালে যখন নির্বাচনী বুথ খুলবে, তখন সবাই আশা করবে বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবার ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে। নির্বাচনের আগে নানা ধরনের নাটকীয় ঘটনাগুলোই যুক্তরাষ্ট্রের আমজনতাকে ভোটকেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে মনে হচ্ছে। এবার আগাম ভোটও পড়েছে আশাপ্রদ সংখ্যায়। এ কারণেই নির্বাচনের দিনও ভোটার সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

দোদুল্যমান সাত অঙ্গরাজ্যের কোনটি কার পক্ষে ভোট দেবে, সে কথা আগাম বলা যাচ্ছে না। তবে দুই প্রার্থীই ঝুলে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করে গেছেন প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত। নিজ দলের ডাকসাইটে নেতাদের পাঠিয়েছেন শেষ মুহূর্তে ফলাফলে পরিবর্তন আনার আশায়।

নির্বাচন যখন দোরগোড়ায়, তখন এফবিআই মার্কিন জনগণকে সতর্ক করে দিচ্ছে ভুয়া ভিডিও নিয়ে। তারা মনে করছে, এই ভুয়া ভিডিওগুলো ছড়াচ্ছে রাশিয়া। তবে এ কাজ রাশিয়ার কোনো প্রতিষ্ঠান, নাকি সরাসরি রাশিয়ান সরকার, সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত হতে পারেনি। ভিডিও দুটোতে সূক্ষ্মভাবে এফবিআইয়ের লোগো লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওগুলোয় একটিতে দেখানো হয়েছে ব্যালট প্রতারণা, অন্যটি তৈরি হয়েছে কমলার স্বামী ডাগ এমহফকে নিয়ে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার একটা যোগাযোগ আছে বলে মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করে থাকেন। রাজনীতিবিদদের অনেকেও তা বিশ্বাস করেন। সেই সম্পর্ক এখনো বিদ্যমান কি না, তা নিয়ে সন্দেহ যায়নি। ২০১৬ সালে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কিন্তু ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ বলে স্বীকৃতি দেননি। ট্রাম্পের সময়ই রাশিয়ার ওপর অধিক কড়া নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক উষ্ণ বলেই মনে করেন রাজনীতি-বিশেষজ্ঞরা। তবে নির্বাচিত হলে এক দিনে মানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন বলে ট্রাম্পের উচ্চারণকে রাশিয়া দাম দিচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে।

মার্কিন জনগণ কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আজ ভোট দেবে? নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য যেন ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকে, সেটাই তারা চাইবে। দুই প্রার্থীর মধ্যে এ প্রসঙ্গে কাকে বিশ্বাস করা যায়, সেটা যে যারমতো করে বুঝে নিয়েই ভোট দেবে। দ্রব্যমূল্য যে বেড়েছে, সেটা স্বল্প আয়ের মানুষ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছেন। যেমন মাস ছয়েক আগেও যে ডিমের ডজন ছিল আড়াই ডলার, সেই ডিম কিনতে হচ্ছে আকার ভেদে সাড়ে চার থেকে সাড়ে ছয় ডলারের মধ্যে। কমলা হ্যারিস স্বীকার করেন যে নানা কারণেই দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। তিনি নিত্যপণ্যের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়া যাঁরা প্রথমবারের মতো বাড়ি কিনবেন, তাঁদের সহায়তা করবেন বলেও জানিয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পও ঘোষণা করেছেন তিনি এই সময়কার মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরবেন। তেলের জন্য আরও খনন করবেন। তাতে জ্বালানির মূল্য কমে যাবে।

অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে ট্রাম্প সব সময়ই সোচ্চার। তিনি অবলীলায় বলে দিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে অবৈধ অভিবাসীদের তিনি ফেরত পাঠাবেন। তাতে আবাসিক সংকট কেটে যাবে। বিষয়টি যে এত সহজ নয়, সেটা ট্রাম্পও জানেন, কিন্তু যাঁরা অবৈধ অভিবাসীদের কারণে অর্থনৈতিক হুমকির মুখে আছেন, তাঁরা ট্রাম্পের এই ঘোষণায় আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে ভোট দিতে পারেন। প্রার্থী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের জন্য আরও যে তিনটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে, তা হলো কর, গর্ভপাত আর অভিবাসন।

আমদানি করা পণ্যের ওপর অধিক মাত্রায় কর আরোপ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবং তাতে পণ্যের ঘাটতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে দেশীয় করপোরেটদের কর রেয়াত দেবেন।

কমলা এভাবে আমদানি করা পণ্যের ওপর অধিক হারে কর আরোপের পক্ষপাতি নন। তিনি বরং বলেছেন, একুশ শতকে চীন নয়, যুক্তরাষ্ট্রই জয়ী হবে। আমদানিতে কর বাড়ালে তা সরাসরি শ্রমজীবী মানুষকে আঘাত করবে বলে মনে করেন কমলা।

গর্ভপাতের ব্যাপারে কমলা খুবই ঋজু অবস্থান নিয়েছেন। নারীর নিজের শরীরের সিদ্ধান্ত নারীই নেবেন—এই হলো কমলার অবস্থান। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হলে গর্ভপাত প্রশ্নটিকে ঝুলিয়ে দেবেন। মনে করিয়ে দিই, ২০২২ সালে সুপ্রিমকোর্টের এক রায়ে গর্ভপাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখলে কমলার প্রতি নারীরা বেশিসংখ্যক ভোট দিতে পারেন।

যুদ্ধ প্রশ্নটি দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর জন্যই জটিল। কমলা বলেছেন, ইউক্রেনের যত দিন প্রয়োজন তত দিন যুদ্ধে সমর্থন দেবেন কমলা। অন্যদিকে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে এই যুদ্ধ শুরুতেই বন্ধ করে দেওয়া। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি এক দিনেই যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন।

ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক ট্রাম্প। কমলা চাইছেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দুই পক্ষ একসঙ্গে বসে একটা সমাধানে আসুক।

মার্কিন নির্বাচন বিষয়ে যাঁরা জানেন, তাঁরা পপুলার ভোট ও ইলেকটোরাল ভোট সম্পর্কেও জানেন। আজ ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে দেশের নাগরিকেরা ভোট দিতে যাবেন। ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট যিনি পাবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ কি না, ব্রিকসের জন্মের পর থেকে দেশটির বিশ্বব্যাপী প্রভাব ক্ষয়িষ্ণু কি না, ন্যাটো আগের মতো শক্তিশালী কি না ইত্যাদি প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। এই প্রশ্নগুলোকে সঙ্গে নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র তার নতুন চলার পথ ঠিক করবে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *