বীর প্রতীক আজাদ আলীর দাফন সম্পন্ন

রাজশাহী

বাঘা(রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার কুশাবাড়িয়া গ্রামের কৃতি সন্তান বীর প্রতীক আজাদ আলীকে (৭৬) ঢাকার বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বাদ আসর বারিধারা ডিওএইচএস মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে ঢাকা থেকে তার মরদেহ সেনাবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টর যোগে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে তার বিদ্যাপীঠ আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনা হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যদায় গার্ড অব অনার শেষে প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। গার্ড অব অনার এর মাধ্যমে সন্মাননা জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী আক্তার। এর আগে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ,ভাতিজা তোমাম্মের হক,ছেলে রুবায়েত আহম্মেদ জয়। উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক,সামাজিক,শিক্ষক-ছাত্র ও এলাকার শ্রেণী পেশার মানুষ।

পরে একই হেলিকপ্টরে দুপুর ২টার দিকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে বাদ আসর বারিধারা ডিওএইচএস মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন সম্পূন্ন করা হয়। স্ত্রী আজাদ সুলতানার মৃত্যুর পর দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। বীর প্রতীক আজাদ আলী মৃত আরজান আলী প্রামাণিক ও মা রাজিয়া খাতুন দম্পতির ছেলে। পারিবারিক সুত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

মরহুমের ভাতিজা তোজাম্মেল হক জানান,সোমবার (১৩ জানুয়ারী) রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি—রাজিউন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসে বসবাস করতেন।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বরে পাকহানাদার বাহিনীর টহল ট্রেনে অ্যামবুশের দায়িত্ব পড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলীর। গেরিলা হামলায় জনবসতি শূণ্যে নাবির পাড়াকে নির্ধারণ করেন। কিন্তু ট্রেনটি অদূরে আবদুলপুর রেলওয়ে জংশনে এসে থেমে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আজাদ আলী সহযোদ্ধাদের নিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করছিলেন। কথা ছিল, টহল ট্রেন অ্যামবুশস্থলে এলে তাঁরা বিস্ফোরণ ঘটাবেন। কিন্তু তাঁর এক সহযোদ্ধার ভুলে ট্রেন আসার আগেই ছয়টি মাইন একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পর আজাদ আলী ও তাঁর সহযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানের দিকে চলে যান। এই বিস্ফোরণে তাঁর বাঁ হাতের কবজি উড়ে যায়। স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের পর খেতাব পাপ্ত হন বীর প্রতীক হিসেবে। ( খেতাবপ্রাপ্ত গেজেট- ৬১৬)।

বাঘার স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি জানান, বাঘার মাদ্রাসায় অবস্থান নিয়ে পাশের ঐতিহাসিক তেঁতুল তলায় পাকিস্থানীদের দোসর রাজাকাররা বাঙ্কার করেছিল। সেই সময় তিনিসহ তাদের আস্তায় হামলায় নের্তৃত্ব দিয়েছেন বীরপ্রতীক আজাদ আলী।

আজাদ আলী ১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান শ্রেণীর তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। মে মাসে ভারতে যান। জুনের শেষে তাঁকে মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাব-সেক্টর এলাকায় গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি গেরিলা অপারেশন করেন তিনি।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *