ফজলুর রহমান,বাগাতিপাড়া(নাটোর): প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুকুরকাটার জন্য আমরা প্রস্তুত নিয়েছি তোমরা ভাই ভাতিজা,কেন এখানে এসেছো সমস্যা কি?
আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় গভীর রাতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির মহোৎসব চলছে তখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির সদস্যরা নিজের গিয়ে বাঁধা প্রদানের সময় এমনই প্রশ্নের সম্মুখীন হন তারা,তাদের সাথে উচ্চস্বরে বলতে শোনা শুধু আমার এখানে কেন বাগাতিপাড়া সকল স্থানেই যেমনে পুকুর কাটা চলছে তেমনি ভাবে এটাও চলছে,প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেই আমি এখানে গাড়ি এনেছি।
ছাত্রদের কথা কাটাকাটির রাতে মাটি কাটার পয়েন্ট গুলো বন্ধ থাকলেও ২দিন পর থেকে আবারো রাতের আধারে মালঞ্চি টু সোনাপুর রাস্তায় ও তমাল তলায় বাজার এলাকায় দেখা মিলে অসংখ্য বিক্রিকৃত মাটির ট্রাক্টর।
এর ফলে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপশি চাষাবাদেও ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া রাস্তার ওপর দিয়ে মাটি বহনের কারণে পাকা রাস্তা নষ্টের পাশাপাশি বৃষ্টি হলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে সড়ক দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির হিড়িক পড়লেও অজ্ঞাত কারনে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
তবে উপজেলা প্রশাসন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। স্থানীয়রা জানান, ঈদের টানা ছুটির সুযোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গভীর রাতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। কোথাও পুকুর সংস্কারের নামে, কোথাও তিন ফসলি কৃষি জমিতে পুকুর খনন চলছে। এসব মাটি বিভিন্ন মাটি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার ইট ভাটা মালিকের কাছে বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ মাটি ক্রয় করে ব্যক্তিগত গর্ত ভরাট করছেন। স্থানীয়রা আরো জানান, প্রতিরাতে উপজেলার অন্তত ৫টি স্থানে এক্সকেভেটর যন্ত্র দিয়ে পুকুর খননের কাজ করা হচ্ছে। রাতভর চলছে ভারি ট্রাকে মাটি বহন।
উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের মালিগাছা মোদ্দাপাড়ায়, সালাইনগর এলাকায়, বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়নের কোয়ালিপাড়ায়, ফাগুয়াড়দিয়াড়ে, এবং পৌরসভার টুনিপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পুকুর খনন চলছে। ঠিকাদারি নিয়ে এক্সকেভেটর (ভেকু) যন্ত্র দিয়ে এসব খনন ও ট্রাকে মাটি বিক্রির কাজ করছেন এক শ্রেনীর মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, এসব ব্যাপারে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসীরা। অথচ জমির শ্রেণী পরিবর্তনসহ ফসলি জমিতে পুকুর খনন করতে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদনের বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরও অসন্তোষ রয়েছে। তাদের কেউ কেউ নিজেদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পুকুর খনন, ভারি যানবাহনে মাটি বহনে রাস্তা নষ্ট এবং প্রশাসনের নিরবতা নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।
এছাড়াও সম্প্রতি একটি স্থানে ছাত্র সমন্বয়কদের কয়েকজন গিয়ে মাটি কাটার প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তবুও বন্ধ হচ্ছে না এই কর্মযজ্ঞ। এ বিষয়ে খোদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, এভাবে অপরিকল্পিত পুকুর খনন চললে কৃষি জমির পরিমান কমে ফসল উৎপাদন ব্যাহত, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। সমতলের এই মাটি বিক্রি হলে সে মাটিও পুরন হচেছ না। তাছাড়াও আইনেও এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, খোঁজ পেলে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। গতরাতেও দুই স্থানে পুকুর খননের খবর পেয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউএনও হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, ধানী শ্রেনীর জমিতে পুকুর খননের জন্য তার দফতরে কয়েকজন গিয়েছিলেন, তবে তাদের কোন প্রকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রতিরাতে অভিযোগ পেলেই অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থলে অভিযান দিলেও কাউকে পাওয়া যায়না। তবে অন্যজেলা থেকে বাগাতিপাড়া উপজেলার ওপর দিয়ে মাটি বহন করলে সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের আইন প্রয়োগের তেমন সুযোগ থাকেনা।