এশিয়া কাপের মিশন শেষ হয়েছে। টাইগারদের পরবর্তী মিশন জিম্বাবুয়ে বধ। হ্যামিল্টন মাসাকাদজাদের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে এ মাসেই ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ৩ ম্যাচের এই ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২১, ২৪ ও ২৬ অক্টোবর। ওয়ানডে সিরিজ শেষে অনুষ্ঠিত হবে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। ক্রিকেটে স্বাগতিকরা বরাবরই বেশ কিছু সুবিধা পায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো, কেমন পিচে খেলা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা। স্বাগতিক হিসেবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে নিজেদের পছন্দমতো পিচ তৈরি করতে পারবে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে বল হাতে দারুণ পারফর্ম করছেন বাংলাদেশের পেসাররা।
সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপেও বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন মাশরাফি, মোস্তাফিজ ও রুবেল হোসেন। তা ছাড়া আরেক টাইগার পেসার আবু হায়দার রনিও প্রমাণ দিয়েছেন নিজের সামর্থ্যরে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজে কি পেসবান্ধব উইকেট বানাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নাকি অতীতের মতো এবারো স্পিনবান্ধব উইকেট বানাবে- এ কৌত‚হল এখন টাইগার সমর্থকদের মধ্যে।
এক সময় বাংলাদেশের বোলিং ছিল পুরোপুরি স্পিননির্ভর। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্বক্রিকেটে অনেক কিছুই বদলে গেছে। বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে টাইগার ক্রিকেটেও। এখন বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের পেস বোলার রয়েছে বাংলাদেশে। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ মাশরাফি বিন মুর্তজা, কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান ও দেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার রুবেল হোসেনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ইতোমধ্যে নজর কেড়েছেন আরেক টাইগার পেসার আবু হায়দার রনি। যে কারণে এখন অধিকাংশ ম্যাচে তিন পেসার নিয়েই খেলে বাংলাদেশ।
সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপের একটি ম্যাচ ছাড়া সব ম্যাচেই বাংলাদেশের জার্সিতে তিনজন পেসার খেলেছেন। ওয়ানডেতে মাশরাফি-মোস্তাফিজ-রুবেলকে নিয়ে গড়া পেস আক্রমণ নিঃসন্দেহে বিশ্বেরর যে কোনো ব্যাটিং লাইনআপের জন্যই আতঙ্কের কারণ। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পিচ তৈরির আগে এটি যে বিসিবিকে বিশেষভাবে ভাবাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পেস বোলিংয়ের শক্তির বিষয়টি বিবেচনা করে বিসিবি যদি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে পেসবান্ধব উইকেট বানায় তবে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। একই অবস্থা দেখা যেতে পারে টেস্টেও। মাশরাফি টেস্টে থাকবেন না সেটা নিশ্চিত। কিন্তু রুবেল থাকবেন ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে। এ ছাড়া মোস্তাফিজেরও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি কাটার মাস্টার টেস্টের দলে থাকেন সে ক্ষেত্রে রুবেল-মোস্তাফিজের সঙ্গে আরো একজন পেসারকে যুক্ত করে তিন পেসার নিয়ে দল সাজাতে পারে বাংলাদেশ। কেননা ইনজুরির কারণে সাকিবের না খেলাটা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে স্পিনার হিসেবে মেহেদি হাসান মিরাজকে রেখে তিন পেসার নিয়ে দল সাজাতে পারে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। আর তিন পেসার নিয়ে খেললে উইকেটও হতে পারে পেসবান্ধব।
কিন্তু অতীত রেকর্ডের দিকে তাকালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও স্পিনবান্ধব উইকেট হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। কেননা দেশের মাটিতে অতীতে বাংলাদেশ যেসব সাফল্য পেয়েছে তার সবই এসেছে স্পিনবান্ধব উইকেটে খেলে। স্পিনবান্ধব উইকেটেই অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে টেস্টে হারিয়েছে টাইগাররা।
এ ছাড়া ওয়ানডেতে বড় সফলতা এসেছে স্পিনবান্ধব উইকেটেই। তা ছাড়া বর্তমান জিম্বাবুয়ে দলে বেশ কয়েকজন ভালোমানের পেসার থাকলেও তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো স্পিনার নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলে বেশ কয়েকজন বিশ^মানের স্পিনার রয়েছেন। তাই স্পিনবান্ধব উইকেট হলে স্টিভ রোডসের শিষ্যরা জিম্বাবুয়ের তুলনায় বেশি সুবিধা পাবে। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে স্পিনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতার বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে। জিম্বাবুয়ে এখন প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলায় ব্যস্ত। সিরিজটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। ওয়ানডে সিরিজ শেষে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে জিম্বাবুয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসবান্ধব ও বাউন্সি উইকেটে খেলেই বাংলাদেশে আসবেন ব্র্যান্ডন টেইলররা। যে কারণে গতির চেয়ে স্পিন ঘূর্ণি দিয়েই তাদের পরাস্ত করাটা বেশি সহজ হবে।
এসব বিষয় বিবেচনা করে পেসবান্ধব নয়, অতীতের মতো এবারো স্পিনবান্ধব উইকেটই বানাতে পারে বিসিবি।