স্টাফ রিপোর্টার: জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধে রাজশাহীতে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। রোববার থেকে রাজশাহী মহানগরীতে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম চলবে। এই পাঁচ দিনে নগরীর অন্তত ৭০ ভাগ কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন ডলার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কুকুরকে জলাতঙ্ক প্রতিরোধক টিকা দেয়ার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। রাজশাহীতে সিটি করপোরেশন এটি বাস্তবায়ন করছে। সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম এর সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মামুন বলেন, তিনটি ধাপে ২০২১ সাল পর্যন্ত কুকুরকে টিকা দেয়া হবে। এখন চলছে প্রথম পর্যায়ের প্রতিষেধক প্রয়োগ। রোববার সকাল থেকে রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডেই বেওয়ারিশ কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে চার থেকে পাঁচজন করে কর্মী এ কাজে নিয়োজিত আছেন। বিশেষ একটি জালে ভরে কুকুরের শরীরে ভ্যাকসিন ইনজেকশন করা হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় ১০ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে। এটি তাদের হিসাব। কিন্তু অনেকেই বলছেন, কুকুরের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। তারা শতভাগ কুকুরকেই টিকা দিতে চান। সেটি সম্ভব না হলে অন্তত ৭০ ভাগ কুকুরকে টিকা দেয়া হবে। এতে নগরবাসীর জলাতঙ্কের ঝুঁকি কমবে।
তিনি জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের দুইজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের একজন ভ্যাকসিন প্রয়োগকারী এবং কুকুর জালে পুরতে পারদর্শী এমন একজন করে মোট চারজনের দল কাজ করছে। তারা চেষ্টা করবেন সব পাড়া-মহল্লায় যেতে। কোন এলাকা বাদ পড়লে সে এলাকার বাসিন্দারা খবর দিলে তারা সেখানেও যাবেন এবং কুকুরকে টিকা দিয়ে আসবেন।
রোববার সকাল ১০টার দিকে একটি দলকে নগরীর কোর্ট স্টেশন মোড়ে কুকুরকে ধরে ধরে টিকা দিতে দেখা যায়। দলটির কুকুর গণনাকারী শাকিল আহমেদ বলেন, সকাল ৮টার দিকে কাজ শুরু করেছেন। দুই ঘণ্টায় প্রায় ৪০টি কুকুরকে টিকা দিয়েছেন। সাধারণত মোড়ে মোড়েই বেওয়ারিশ কুকুর বেশি দেখা যাচ্ছে। সে জন্য তারা আগে মোড়গুলোর দিকেই নজর দিচ্ছেন।
কোর্ট স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার জাহিদ বলেন, পুরো মহল্লায় বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তারা সব সময় কুকুরের আতঙ্কে থাকেন। তবে রাতে যখন তিনি দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন তখন পরিস্থিতি থাকে আরও বেশি আতঙ্কের। কুকুরের ভয়ে তিনি বিস্কুট হাতে নিয়ে হাঁটেন। কুকুর এগিয়ে এলে বিস্কুট ছুঁড়ে দেন। তখন কুকুর বিস্কুট খেতে থাকলে তিনি দ্রুত চলে যান। এখন কুকুরকে টিকা দিতে দেখে ভাললাগার কথাও জানান তিনি।
তবে একই এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার জাহান মনে করেন, এতো বেশি সংখ্যক কুকুর আছে যে টিকা দেওয়া সম্ভব না। তাই কুকুর ধরে ধরে বন্ধ্যাকরণ করে দিতে হবে। তাহলে এর বংশবিস্তার কিছুটা কমবে। মানুষের আতঙ্কও কমবে। যদিও এ ধরনের কোনো কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরু করেনি রাজশাহী সিটি করপোরেশন। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করা হয়।
র্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুরের মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। কুকুরের কামড়ে বা আঁচড়ে রক্ত বের না হলেও জলাতঙ্ক রোগ হয়। কুকুরের কামড়ে সংক্রমণ, টিটেনাস রোগের আশঙ্কা থাকে। শিশুদের নাক-মুখে কুকুর কামড়ালে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই তারা মারা যায়। কুকুরের সংখ্যা বেড়ে গেলে সাধারণত সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো তা নিধন করত। কিন্তু অমানবিক হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সাল থেকে সারাদেশে কুকুর নিধন বন্ধ আছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে দেশের সবখানে কুকুরের উৎপাত বেড়ে যায়। তখন কুকুরের আচরণও অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। বিক্ষিপ্তভাবে ছোটাছুটি করে এবং মুখ দিয়ে লালা ঝরে। লোকজন একে ‘পাগলা’ কুকুর বলে। এ ধরনের কুকুর কামড় দিলেই জলাতঙ্ক রোগ হয়। তাই এবার আগে আগেই কুকুরকে জলাতঙ্ক মুক্ত করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।