বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহী বাঘার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একুশে পদকপ্রাপ্ত পলান সরকার আর নেই। শুক্রবার (০১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের পূর্বপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) তিনি। মৃতুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। মৃত্যুকালে ৬ ছেলে ও ৩ মেয়ে রেখে যান তিনি।
পলান সরকার পাঠাগারের সাধারন সম্পাদক,তার ৫ম ছেলে হায়দার আলী জানান, তিনি দীর্ঘ দিন থেকে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
বইপড়া আন্দোলন গড়ে তুলে আলোড়ন সৃষ্টিকারী পলান সরকার সামাজিকভাবে অবদান রাখার জন্য ২০১১ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মান ‘একুশে পদক’। রাজশাহী জেলার ২০টি গ্রামে গড়ে তুলেছিলেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন। মাইলের পর মাইল হেঁটে একেকদিন একেক গ্রামে যেতেন তিনি। নিজের টাকায় বই কিনে পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঝোলাভর্তি বই কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন গ্রামে।
বাড়ি বাড়ি কড়া নেড়ে আগের সপ্তাহের বই ফেরত নিয়ে নতুন বই পড়তে দিতেন। এলাকাবাসির কাছে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন ‘বইওয়ালা দুলাভাই’ হিসেবেও।
ডায়াবেটিস ধরা পড়ায় হেঁটে হেঁটেই তিনি বই বিলি করতেন। একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এই কাজ করেছেন তিনি। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার দৈনিকে তার ওপর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর আগে তাকে নিয়ে আসা হয় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে। এছাড়া তাকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটকও তৈরি হয়েছে। পলান সরকার ছিলেন একজন বই পাগল মানুষ। স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতিও ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত পলান সরকার।
১৯২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম হারেজ উদ্দিন। জন্মের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় তাঁর বাবা মারা যান। আর্থিক টানাপড়নে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাকে।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। শোক বার্তায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, পলান সরকারের মৃত্যুতে জাতি একজন বিশিষ্ট সমাজকর্মীকে হারালো। তিনি বলেন, পলান সরকার রাজশাহীর ২০টি গ্রামজুড়ে গড়ে তুলেছিলেন অভিনব শিক্ষা আন্দোলন এবং নিজের টাকায় বই কিনে পড়তে দিতেন পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষকে। তার অবদান রাজশাহীর মানুষসহ বাঙালি জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।