স্বদেশবাণী ডেস্ক: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এর আগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একমত পোষণ করে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যমূলক সহিংসতা এবং সংগঠিত ঘৃণার বিরোধিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসও সহিংসতার নিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্মের স্বাধীনতা পবিত্র। প্রত্যেককে অবশ্যই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং পরিকল্পিত ঘৃণার বিরুদ্ধে অবিচল থাকতে হবে। সবাই যাতে নির্ভয়ে ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিতে পারে, এর নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সব ধর্মের বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে আছে। বাংলাদেশে সব ধর্মের লোকদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ঐক্য রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার স্বাধীন তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। টুইটে সেপ্পো জানান, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ফল, যা সংবিধানের মূল্যবোধের পরিপন্থি। এটি বন্ধ করা দরকার। তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক সহনশীল বাংলাদেশকে শক্তিশালী করার জন্য সবাইকে হাত মিলানোর আহ্বান জানান।
এদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব চলাকালে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। তাদের বাড়িঘর, মন্দির ও পূজামণ্ডপে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার খবর দেশে সংখ্যালঘুবিরোধী মনোভাবের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। হিন্দুদের ওপর বারবার এ ধরনের হামলা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয় ধ্বংস করার অর্থ-রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার দিকে ব্যর্থ হয়েছে।
সংস্থাটির দাবি, ধর্মীয় সংবেদনশীলতাকে লক্ষ করে উসকানি ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করা একটি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। দেশে সংখ্যালঘুদের এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে পুঙ্খানুপুঙ্খ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে ঘটনার তদন্ত করতে হবে। সহিংসতা ও ভাঙচুরের জন্য সন্দেহভাজনদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
১০ অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে ফেসবুক পোস্টের পর সারা বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ও দুর্গাপূজার স্থানগুলোয় হামলা শুরু হয়। সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, মুন্সীগঞ্জ, বান্দরবান ও রংপুর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে রয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছে রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে। সেখানে হিন্দুদের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছেন অনেক।