স্বদেশবাণী ডেস্ক: শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে পাবনার রুহুল বিলের ধারে জড়ো হয়েছেন হাজারো মানুষ। তাদের কাছে পলো, ঠেলা জাল, চাকি জাল, খুইরা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ছাড়াও নানান ধরনের দেশীয় মাছ ধরার সরঞ্জাম।
এদের মাঝে রয়েছেন শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ ছাড়াও বেশ কিছু কিশোরী। এই কাক ডাকা ভোড়ে তারা সকলে জড়ো হয়েছেন বর্ষা পরবর্তী বিলের পানিতে নেমে মাছ ধরতে। যার অঞ্চলিক প্রচলিত নাম বাউত উৎসব। যা আবহমানকাল ধরে পাবনার ভাঙ্গুড়ার চলনবিলাঞ্চলে চলে আসছে।
বিগত বছরগুলোতে উপজেলার এই বিলাঞ্চলে প্রাকৃতিক পদ্ধতির বদলে বিলের পানিতে বিষ প্রয়োগ বা বিলের পানি সেঁচে মা মাছ তুলে নেয়ায় দেশীয় মাছের প্রজনন ছিলো খুবই কম।
কিন্তু সম্প্রতি কয়েক বছরে উপজেলার বৃহৎ রুহুল বিলের গভীর অংশটুকু মৎস অভয়াশ্রম ঘোষনা করায় বেড়েছে দেশীয় মাছের প্রজনন। ফলে আবার মহোৎসবে রুপ নিয়েছে বাউত উৎসব। দেশের দূর দুরান্ত থেকে শৌখিন মাছ শিকারীরা দল বেঁধে এসেছেন মাছ ধরতে।
সুদূর চুয়াডাঙ্গা থেকে বাস রিজার্ভ করে চল্লিশ জনের একটি দল এসেছেন শুক্রবার রাতেই। উদ্দেশ্য বিলের পানিতে মাছ ধরা। এই দলের সমন্বয়ক বোরহান উদ্দিন বলেন আমার বোনের শ্বশুর বাড়ি এই উপজেলার কালিকাদহ গ্রামে। গতবছর বোনের বাড়িতে এসে দেখেছিলাম এই মাছ ধরার উৎসব তখন থেকে নিয়ত ছিলো এই বছর মাছ ধরতে আসবো। বিষয়টি নিয়ে এলাকার বন্ধুদের সাথে আলোচনা করলে এক এক করে চল্লিশজন হয়ে যায়। ফলে বাস রিজার্ভ করে চলে এসেছি।
শুধু তাই নয় সুদুর যশোর থেকে এসেছেন এক সেনা কর্মকর্তা সাংবাদিক বুঝতে পেরে এগিয়ে এসে জানান দিলেন তিনি ছাড়াও আর দুইজনের উপস্থিতি। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা নাটোর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন প্রচুর মানুষ ভোর থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে নসিমন, করিমন, ছোট বাস, মিনি ট্রাক ছাড়াও মোটর সাইকেল যোগেও এসে পৌছেছেন অনেকে।
বিলের পানিতে সাধারনত ধরা পরে শোল, বোয়াল, রুই, গজার, ফলি, (চিতল) কাতলা ইত্যাদি মিঠা পানির মাছ। এছাড়া বাউতদের চলাচলে পানি কাদায় ঘোলা হয়ে উঠলে শুরু হয় ঘোলা পানিকে ভেসে ওঠা দেশীয় পুঁটি মাছ ধরা। সাধারনত ঠেলা জালি দিয়ে ধরা হয় এই পুঁটি। কখনো কখনো এই জালে ধরা পরে যায় বিশালাকার কোনো মাছ। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এই মাছ ধরা।
বিলের ঠান্ডা পানিতে অসার হয়ে আসা হাত স্বাভাবিক করতে কেউ কেউ বিলের ধারে থাকা শুকনো খড় কুটোয় ধরিয়ে দেয় আগুন। এছাড়া পানিতে নামার সময় কেউ কেউ শরীর গরম রাখতে খেয়ে ফেলেন আস্ত কাঁচা সুপারী আবার কেউ নিয়ে এসেছেন মধুর বোতল।
মাছ না পেয়ে ষাটোর্ধ বৃদ্ধ নজরুল বলেন, সেই দিন আর নাই চায়না জালে সব মাছ আগে ধরা পরে যায়। চায়না জাল বন্ধ না হলে দেশীয় মাছ আর বড় হওয়ার সুযোগ পাবে না।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার বেশ কিছু অংশ নিয়ে গঠিত রুহুল বিল। প্রতি বছর বর্ষা পরবর্তী সময়ে শৌখিন মাছ শিকারিরা এ উৎসব পালন করে থাকেন। এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের এটি একটি অতি পুরোনো উৎসব। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ মিলিত হয়ে মাছ শিকারের এই উৎসব আজও টিকিয়ে রেখেছেন এই অঞ্চলবাসী। দেশীয় মাছ রক্ষার্থে বর্তমান সরকার বিভিন্ন কাজও করছে। এই ঐতিহ্য যেন বিলুপ্ত না হয়ে যায় সবাইকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।