স্বদেশ বাণী ডেস্ক: গতকাল দ্বিতীয় দফায় হওয়া সংলাপেও আসেনি কোনো সমাধান | তবে হবে আরও একটি সংলাপ। এ পর্যন্ত দুটি সংলাপে পাওয়া কী? স্পষ্ট বার্তা নেই ঐক্যফ্রন্টের। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের পথকেই বেছে নিচ্ছেন তারা। হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস পথে না গিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সাত দফা দাবিতে হওয়া জোটের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী, খুলনা এবং ময়মনসিংহে সমাবেশ এবং নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে রাজধানীতে প্রায় ৫-১০ লাখ লোকের উপস্থিতির মাধ্যমে বৃহৎ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এ কর্মসূচি চলবে।
এদিকে গতকাল দ্বিতীয় দফায় হওয়া সংলাপেও আসেনি কোনো সমাধান। বৈঠক সূত্র মতে, সাত দফার পাশাপাশি বিশেষ চারটি এজেন্ডা নিয়ে সংলাপ হয়। ১. খালেদা জিয়ার মুক্তি প্যারোলে নয়, নিঃশর্ত দিতে হবে। ২. একজন উপদেষ্টা, ১০ জন উপ-উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার। ৩. সংসদ রেখে নির্বাচন হবে না, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ৪. তফসিল ঘোষণা পেছাতে হবে। কিন্তু সংবিধানের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ সব প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সংলাপ আন্দোলনের অংশ, আন্দোলন চলবে এবং পূর্বঘোষিত রোডমার্চ অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে।
সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা সংলাপের মাধ্যমে শান্তিতে বিশ্বাসী অন্যথায় দেশে ভিন্ন পরিবেশের দায় সরকারকেই নিতে হবে। আসম আবদুর রব বলেন, আদোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। এদিকে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন বলেন, বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন কারো ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে জবাব না চাইলেও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে তিনি শাসিয়েছেন! গতকাল জনসভায় কেন উত্তপ্ত বক্তব্য দেয়া হলো এ বিষয়ে মান্নার কাছে জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। গতকাল গণভবনের ব্যাংকোয়েট হলে বেলা ১১টা থেকে তিন ঘণ্টার সংলাপে দুপক্ষেই ১১ জন করে অংশ নেন।
ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের ফলাফল জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন বলেন, একটি অর্থবহ নির্বাচনের আশা নিয়েই তারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপে গিয়েছিলেন। ‘আমরা তো সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি, করছি, করে যাব… দেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা, একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে সব কিছু হোক। দায়িত্ব তো সরকারের। বল এখন সরকারের কোর্টে।’কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকের (গতকাল) সংলাপে আমরা আমাদের সাত দফা দাবি নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছি। আমরা বলেছি যে অল্প পরিসরে আরও আলোচনা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক।’
তিনি বলেন, সারাদেশে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যেসব ‘মিথ্যা ও গায়েবি’ মামলা করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে আর কোনো ‘গায়েবি ও হয়রানিমূলক’ মামলা বা গ্রেপ্তার করা হবে না প্রধানমন্ত্রী সংলাপে আশ্বাস দিয়েছেন।পরশু রাজশাহীতে সমাবেশ।’ তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে, তাদের সঙ্গে নিয়েই দাবি আদায় করা হবে।’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৭ দফার প্রথম দফাটাই ছিল বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে অবশ্যই আলোচনা হয়েছে। আমরা জোর দিয়ে বলেছি, তিনি তো আইনগতভাবে মুক্তি পাওয়ার যোগ্য, জামিন পাওয়ার যোগ্য।
’সংলাপ শেষে বেরিয়ে এসে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আলোচনা মনঃপুত হয়নি। সংলাপে কোনো সমাধান আসেনি।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘দুপক্ষই নিজেদের দাবিতে অনড়। কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। ঐক্যফ্রন্ট আবারো সংলাপের দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
*ঐক্যফ্রন্টের চার প্রস্তাবে ক্ষমতাসীনদের সরাসরি ‘না’ *জনসভায় উত্তপ্ত বক্তব্যের কারণে মান্নাকে শাসিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
*‘সংলাপ ব্যর্থ হলে দায় সরকারের’ বললেন ড. কামাল
*আন্দোলন চলবে, রাজশাহীতে সমাবেশ এবং ইসি অভিমুখে পদযাত্রা অব্যাহত থাকবে-ফখরুল
*বিভাগীয় সমাবেশ শেষে আসছে রাজধানীতে ৫-১০ লাখ লোকের অবস্থান কর্মসূচি
*আশার আলো নেই সংলাপে
’সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের পক্ষে আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পরিদর্শনের অনুমতি, সত্যিকারের রাজনৈতিক মামলা থাকলে তা প্রত্যাহারের মতো কয়েকটি বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের দাবির বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নির্বাচন পিছিয়ে সংসদের মেয়াদপূর্তির পরের ৯০ দিনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আদলে ভোট করার দাবি তুলেছেন জানিয়ে কাদের বলেন, সংবিধানের বাইরের কোনো প্রস্তাব মেনে নেয়ার কোনো অবকাশ নেই।
কাদের বলেন, ‘এটা নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার একটা বাহানা। এই পিছিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁক ফোকর হয়ত খুলে দেয়া হচ্ছে। যেখান দিয়ে তৃতীয় কোনো অপশক্তি এসে ওয়ান-ইলেভেনের মতো সেই অনভিপ্রেত অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা বলার অর্থই হলো জনগণের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের দাবির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নেই বলে এমন কথা তারা বলছেন। আজকে নির্বাচন পেছানোর কথা আমরা বলছি নির্বাচনকে শুধুমাত্র অর্থবহ করার জন্য।
’আজ একাদশ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে ফ্রন্টের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কালকে (আজ) যদি তফসিল ঘোষণা করে, আমরা নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করব। আমরা তো আন্দোলনেই আছি।’ সরকার যদি সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার পথে না আসে, তার দায়দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেয়ার ৯০ দিন পরই তো নির্বাচন হবে। সংসদ ভেঙে দেয়াটা সংবিধানের অন্তর্গত এবং এখনই এটি সংবিধানে আছে।’ একই সাথে দুটো সংসদ থাকবে এটা তো কোনো নিয়ম হতে পারে না। উনারা যদি বলেন এটা নেই, তাহলে উনারা ভুল বলেছেন। এটি সংবিধানের মধ্যে আছে, সাংবিধানিকভাবেই আমরা প্রস্তাব করেছি। এর মানে নির্বাচন আমরা পেছাতে চাইছি এমনটা নয়।’
এই অবস্থায় কী আশা করছেন এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখানে আশার কোনো প্রশ্ন নেই। আমরা একটি নির্বাচনকালীন সরকার চাচ্ছি জনগণের দাবি হিসেবে। এটা সরকার যদি না মানে, তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা তা আদায় করব।
’দুই দফা সংলাপে কী পেলেন এ প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘পাওয়ার ব্যাপারটা রিলেটিভ ব্যাপার। আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সরকারের কাছে গেছি। তারা বলেছে যে ভবিষ্যতে তারা আলোচনা করে দেখতে পারে, সুযোগ আছে।’