স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যদি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান ও তারেক জিয়াকে দেশে আনতে চান তাহলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন। জনগণের রায়ের মধ্য দিয়ে এই সরকারেরর পতন নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সাত দফা না মেনে নির্বাচন বাংলাদেশে হতে পারে না। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, রাজবন্দিদের মুক্তি দেন। আমাদের সাত দফা মেনে নেন। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন করেছিলেন, সেটা সংবিধানে ছিল? ১৭০ দিন হরতাল কি সংবিধানে ছিল?
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দাবি পূরণ না হলে জনগণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করে দেশে একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যয়। আমাদের কথা পরিষ্কার- নির্বাচনের মাঠ সমান করতে হবে। সব দলকে সমান অধিকার দিতে হবে। মিথ্য মামলায় গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় এই তফসিল গ্রহণযোগ্য হবে না।
ফখরুল বলেন, রাজশাহীর মানুষের কাছে আমাদের আবেদন। আপনারা সংগ্রামী মানুষ, লড়াকু মানুষ। আমাদের মনে আছে, রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজশাহীর কত মানুষের প্রাণ দিয়েছে। গণতন্ত্রকে রক্ষার করার এই আন্দোলনকে প্রাণ দিয়ে হলেও আমরা সফল করবই। জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন- আপনারা কি খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চান? তাহলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে হবে।
বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না : মওদুদ
এবার বিনা চ্যালেঞ্জে সরকারকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, এবার ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এবারের জনজোয়ারে আগামী নির্বাচনে নৌকা ভেসে যাবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, তাই সংলাপ সফল হয়নি।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, সিইসি সরকারের তল্পিবাহক ও অকার্যকর। বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। বেগম জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন চলবে। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনাকে ১০ শীত কাটাতে হবে : মান্না
সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এক মাঘে শীত যায় না। এটি ভুলে গেলে চলবে না। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যদি এক শীত কারাগারে কাটাতে হয়, শেখ হাসিনাকে ১০ শীত কাটাতে হবে।
মান্না বলেন, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে, একতরফা নির্বাচনী বৈতরণী পার করা সম্ভব নয়। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বানচাল করতে চায় না। ৭ দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ঐক্যফ্রন্ট যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সরকার সে ফাঁদ পেতেছে। আমরা আবারো নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানাই তফসিল পেছানোর। আমাদের দাবি না মানলে কোনো নির্বাচন নয়।
রাজশাহীর জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে মান্না বলেন, ঢাকায় আসেন, দেখি ওরা আমাদের কথা শুনে কিনা। আমরা আলোচনা করে সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু এরই মাঝে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে।
নির্বাচনে গেলে হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী, খালেদা আমৃত্যু কারাগারে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
বিএনপির স্থায়ী মিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। দেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না করে কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। কেএম নূরুল হুদার অধীনে নির্বাচনে গেলে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে; হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী ও খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক জিয়া নির্বাসনে থাকবেন।
তিনি বলেন, দেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি না করে কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। সংলাপে কোনো সমাধান না আসলেও কেবল আওয়ামী লীগকে একতরফা সুবিধা দিতে এই আয়োজন করেছে ইসি। শেখ হাসিনার অধীনে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে হাসিনা আজীবন প্রধানমন্ত্রী ও খালেদা জিয়া আমৃত্যু কারাগারে এবং তারেক জিয়া নির্বাসনে থাকবেন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করি এদেশের মানুষ আমাকে আপনাকে ছাড়বেন না। তাই বলছি হুদাকে নামান, শেখ হাসিনাকে নামান। আমরা নির্বাচনে গেলে জয়ী হবো যদি ভোট দিতে পারি।
সরকার পালাবার পথ খুঁজছে : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
জনসভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সরকারের ভীত নড়ে গেছে। তারা পালাবার পথ খুঁজছে। সরকার যত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক না কেন, ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে হবে। জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জনগণের বিপক্ষে গিয়ে কেউ কখনো বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও পারবে না।
আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি : মোস্তাফা মোহসীন মন্টু
জনসভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু বলেন, দেশকে একটি সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে না চাইলে ৭ দফা মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। মন্টু সরকারের উদ্দেশে বলেন, আমরা যে দাবিগুলো দিয়েছি, সেগুলো মেনে নিন। আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি। সেগুলো মেনে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
খালেদাকে ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না : মোশাররফ হোসেন
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অলিখিত বাকশাল কায়েম করতে সরকার দেশের সব সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রশাসনের সব স্তরে দলীয়করণ করেছে। ড. মোশাররফ বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তারপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
জান দেব তবুও দাবি ছাড়ব না : আ স ম আব্দুর রব
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা আ স ম আব্দুর রব বলেছেন, জান দেব, দাবি ছাড়ব না। মরতে হলে মরব, দাবি আদায় করে ছাড়ব। তিনি বলেন, সংবিধানের জন্য জনগণ নাকি জনগণের জন্য সংবিধান? সংবিধানের জন্য দেশ নাকি দেশের জন্য, জনগণের জন্য সংবিধান? এইসব কথা কারে শেখান? আজকে বলছেন, তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলন বেআইনি। যখন বিরোধী দলে ছিলেন তখন বেআইনি না, সরকারে থাকলে আইনি, এসব চলবাহানা চলবে না। ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, দাবি মানতে হবে। জান দেব, দাবি ছাড়ব না। মরতে হলে মরবো, দাবি আদায় করে ছাড়ব (ইনশাল্লাহ)। জনগণ আমাদের পক্ষে, আল্লাহ আমাদের পক্ষে।
এর আগে আজ দুপুর ২টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে জনসভা শুরু হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আজকের জনসভায় যোগ দিতে পারেননি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন।