স্বদেশ বাণী ডেস্ক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন জিম্বাবুয়ের সাবেক রাষ্ট্রপতি রবার্ট মুগাবে। তার বয়স হয়েছিলো ৯৫ বছর।আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জিম্বাবুয়ের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইমারসন ম্ননানগাগওয়ার অফিসিয়াল টুইটারে মুগাবের মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়।
মুগাবে অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন রকম শারিরীক সমস্যায় ভুগছিলেন।এর দুই সপ্তাহ আগে, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন মাঙ্গাগোয়া এক কেবিনেট মিটিংয়ে বলেছিলেন , চিকিৎসকেরা মুগাবের চিকিৎসা সমাপ্ত ঘোষণা করেছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
রবার্ট মুগাবে জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতাসীন ছিলেন। শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতার মর্যাদা পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ১৯৮০ – ১৯৮৭ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৮৭ সাল থেকে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর তারিখে রবার্ট মুগাবে ৩৭ বছর শাসনের পরে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
১৯৬০-এর দশকে মুগাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন (জানু)-এর মহাসচিব ছিলেন তিনি এবং তাঁর দল সংখ্যালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ শাসক ইয়ান স্মিথের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দশ বছরের অধিক সময় তাঁকে রোডেশিয়ার কারাগারে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে অবস্থান করতে হয়। এডগার তেকেরের সাথে ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়ে রোডেশিয়া ত্যাগ করেন। মোজাম্বিকে অবস্থান করে জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা রোডেশিয়ান বুশ ওয়ারে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৯ সালে সমাপ্ত ঐ যুদ্ধে মুগাবে অনেক আফ্রিকাবাসীর মন জয় করে বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন রবার্ট মুগাবে। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরা ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করে ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এতে মুগাবে জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে ১ম প্রধানমন্ত্রীত্বে অভিষিক্ত হন। দেশ পুণর্গঠনে পূর্বে যুদ্ধরত দলসহ শ্বেতাঙ্গ রোডেশিয়ান এবং বিবদমান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐকমত্য্যে পৌঁছান।
দক্ষিণ রোডেশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে হারারের জিম্বা জেলার কুতামা জেসুইত মিশনের কাছে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মালাউই পিতা গ্যাব্রিয়েল মাতিবিলি এবং শোনা অধিবাসী মাতা বোনা উভয়েই রোমান ক্যাথলিক ছিলেন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় ছিলেন। বড় দুই ভাই – মাইকেল এবং দোনাতো উভয়েই তাঁর শৈশবকালীন সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর বাবা গ্যাব্রিয়েল মাতিবিলি একজন কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। ১৯৩৪ সালে মাইকেলের মৃত্যুর পর মুগাবে পরিবার কাজের সন্ধানে বুলাওয়ে চলে যান। মুগাবে ম্যারিস্ট ব্রাদার্স এবং জেসুইট বিদ্যালয়সহ মর্যাদাপূর্ণ কুতামা কলেজে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি আইরিশ পাদ্রী ফাদার জেরোম ও’হিয়ার ছত্রচ্ছায়ায় নিজেকে গড়েন।
তরুণ বয়সে মুগাবে সামাজিক কিংবা শারীরিক কোনভাবেই জনপ্রিয় ছিলেন না। অধিকাংশ সময়ই তিনি ধর্মযাজক অথবা তাঁর মায়ের সাথে পড়াশোনা করে সময় কাটাতেন। অন্যান্যদের সাথে খেলতে পছন্দ করতেন না বরং নিজেই নিজের সাথে মজা উপভোগ করতেন। তাঁর ভাই দোনাতো বলেছিলেন যে একমাত্র বন্ধু হিসেবে ছিল বই।
শিক্ষক হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করলেও তিনি পড়াশোনার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ফোর্ট হেয়ারে চলে যান। সেখানে ১৯৫১ সালে ইউনিভার্সিটি অব ফোর্ট হেয়ার থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। সাক্ষাৎ করেন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব – জুলিয়াস নায়ারে, হার্বাট চিতেপো, রবার্ট সবুকি এবং কেনেথ কাউন্ডা প্রমূখদের সাথে। এরপর সলিসবেরি (১৯৫৩), গুইলো (১৯৫৪) এবং তাঞ্জানিয়ায় (১৯৫৫-১৯৫৭) পড়াশোনা করেন।
ধারাবাহিকভাবে দূরশিক্ষণ প্রকল্পে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা থেকে – প্রশাসন ও শিক্ষায় স্নাতক এবং ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এক্সটার্নাল প্রোগ্রাম থেকে বিজ্ঞান, আইন বিষয়ে স্নাতক এবং বিজ্ঞান ও আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। কারাগারের অভ্যন্তরে থেকে তিনি দু’টি আইন ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও, জিম্বাবুয়ের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
স্ব.বা/বা