শিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা, ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

গণমাধ্যম রাজশাহী

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বগুড়ার ধুনটে সাত বছরের শিশু মাহি উম্মে তাবাচ্ছুমকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বগুড়ার দ্বিতীয় শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর রোববার দুপুরে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।  স্পেশাল পিপি আশেকুর রহমান সুজন এ তথ্য দিয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বগুড়ার ধুনট উপজেলার নছরতপুর গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে বাপ্পি আহম্মেদ (২৪), একই গ্রামের দলিল উদ্দিনের ছেলে কামাল পাশা (৩৭), ছানোয়ার হোসেনের ছেলে শামীম রেজা (২৪) ও মৃত সাহেব আলীর ছেলে লাভলু শেখ (২৩)।

আদালত সূত্র জানায়, ধুনট উপজেলার নছরতপুর গ্রামের বেলাল হোসেন খোকন ও মরিয়ম ডেইজি ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিক। তারা ঢাকায় কাজ করায় তাদের একমাত্র মেয়ে মাহি উম্মে তাবাচ্ছুম গ্রামে দাদা-দাদির কাছে থাকত। সে স্থানীয় পাঁচথুপি-নশরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত।

২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিশুটি দাদা, দাদি, ফুফু হালিমা খাতুন ও সুলতানা বেগমের সঙ্গে নছরতপুর পশ্চিমপাড়া কবরস্থান মাঠে ওয়াজ মাহফিল শুনতে যায়। রাত ১০টার দিকে শিশু মাহি উম্মে তাবাচ্ছুম মাহফিল মঞ্চের পাশে মিষ্টি কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে তার মরদেহ পাওয়া যায়। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর শিশুর বাবা বেলাল হোসেন ধুনট থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রিপন মিঞা তদন্তকালে ২৫ ডিসেম্বর সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে বাপ্পি আহম্মেদ, কামাল পাশা, শামীম রেজা ও লাভলু শেখকে গ্রেফতার করেন। এরা সবাই ২৫ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে আদালতে ১৬৪ ধারায় শিশুটিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।

তারা জানান, আসামি বাপ্পী পূর্বশত্রুতার জের ধরে শিশুটিকে বাদাম কিনে দেওয়ার প্রলোভনে পাশের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কক্ষে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তিন বন্ধুকে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নিস্তেজ হওয়া ও শিশুটি তাদের চিনে ফেলায় শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে মরদেহ একটি বাঁশঝাড়ে ফেলে দেওয়া হয়।

সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর জাহিদুল হক ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর চার আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ডিএনএ পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়।

আদালতের স্পেশাল পিপি আশেকুর রহমান সুজন জানান, আদালত মাত্র ১১ মাসে বিচার কাজ শেষ করে রোববার দুপুরে রায় ঘোষণা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আদালত চার আসামির উপস্থিতিতে তাদের মৃত্যুদণ্ড, এক লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। তাদের উচ্চ আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে বিধিমোতাবেক মৃত্যু পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন। এছাড়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে আসামিরা অর্থদণ্ড পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিধিমোতাবেক সরকারি পাওনা হিসেবে আদায় করা হবে।

রায় ঘোষণার পর শিশুর বাবা বেলাল হোসেন ও মরিয়ম ডেইজি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, খুনি ও ধর্ষকদের ফাঁসির রায় কার্যকর হলেই তাদের মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে।

শিশুটির মা আরও বলেন, পৃথিবীতে এমন নৃশংস ও অমানবিক ঘটনা যেন আর না ঘটে। তার মতো আর কোনো মায়ের যেন বুক খালি না হয়।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *