মাছের খাবারে মুরগির নাড়িভুঁড়ি

কৃষি জাতীয় স্বাস্থ্য

চাষিদের দাবি, মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে। এছাড়া মাছের গ্রোথও তুলনামূলক বাড়ছে।

পটুয়াখালী পৌর শহরের নিউমার্কেট বাজার। শহরের প্রধান এ বাজারটিতে কোনো মুরগির দোকানেই কেউ নাড়িভুঁড়ি ফেলে দেন না।

সম্প্রতি রাতে বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তার মোটরসাইকেলের পেছনে নীল ড্রামে কী যেন নিয়ে যাচ্ছেন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ড্রামে মুরগির নাড়িভুঁড়ি রয়েছে। এগুলো মাছের খাবার হিসেবে দেওয়া হবে। প্রতিদিন দুবার বাজার থেকে নাড়িভুঁড়ি সংগ্রহ করেন তিনি। এ জন্য বিভিন্ন মুরগির দোকানির সঙ্গে বাৎসরিক চুক্তি করেছেন। বছরে দিতে হয় ৩০-৪০ হাজার টাকা।

পটুয়াখালী নিউমার্কেট বাজারে বর্তমানে ১৮-২০টি মুরগির দোকান রয়েছে। সব দোকানের নাড়িভুঁড়ি কোনো না কোনো মাছচাষী কিনছেন।

নিউমার্কেটের মুরগি বিক্রেতা সোহাগ মল্লিক বলেন, ‘আগে নাড়িভুঁড়ি নদীতে ফেলে দিতাম। কিন্তু এখন ফেলি না। বালতিতে সংগ্রহ করে রাখি, দুপুরে কিংবা রাতে মাছের খামারিরা এসে নিয়ে যান। এ জন্য একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেয়। এ থেকে দোকান খরচের টাকা হয়ে যায়।’

পটুয়াখালী আউলিয়াপুর এলাকার খামারি বাশির মৃধা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে মাছের খাবারের দাম অস্বাভাবিক। এ কারণে মুরগির নাড়িভুঁড়ি ব্যবহার করি। এতে ক্ষতিকর কোনো উপাদান নেই। বিশেষ করে নাড়িভুঁড়ির মধ্যে যে খাবারটি থাকে সেটা মূলত মুরগির ফিড।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু মুরগির খাবার মান নিয়ন্ত্রণ করেই তৈরি এবং বিক্রি হয়, সেই খাবার মাছে খেলে ক্ষতির কোনো কারণ দেখি না। এরপরও পচা বাসি না করে আমরা সরাসরি নাড়িভুঁড়ি বাজার থেকে এনেই পুকুরে দেই। দেওয়ার ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই মাছ সেগুলো খেয়ে নেয়। এছাড়া এটি ব্যবহারে মাছের গ্রোথ ভালো যাচ্ছে। এতে খামারিরা লাভের মুখ দেখছি।’

তবে মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, মুরগির নাড়িভুঁড়ি ব্যবহারে মাছ থেকে একটা গন্ধ আসতে পারে। এছাড়া এটি ব্যবহারে যথাযথ গবেষণা দরকার।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মু. মাহফুজুর রহমান  নিউজকে বলেন, ‘মাছ চাষে মুরগির নাড়িভুঁড়ি ব্যবহার হচ্ছে এটি খামারিদের কাছ থেকেই জেনেছি। এটি ব্যবহার করে তারা লাভবান হচ্ছেন। তবে এ ধরনের খাবার ব্যবহার করলে মাছ থেকে একটা গন্ধ আসতে পারে। এতে মাছের বাজারদর কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে মুরগির নাড়িভুঁড়ি ব্যবহার করে উৎপাদিত মাছ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কোনো হুমকির আছে কি না সে নিয়ে এখনো গবেষণা নেই। এ বিষয়ে অধিদপ্তরকে জানাবো।

মাছের খাদ্য হিসেবে নাড়িভুঁড়ির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম আখতারুজ্জামান বলেন, মুরগির নাড়িভুঁড়ি মাছ খেলে প্রাথমিকভাবে কোনো সমস্যা নেই বলা যায়। তবে দেখতে হবে যে, ওই মুরগিটা কি খাচ্ছে? তার শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক যাচ্ছে কি না? যদি থাকে তবে সেটা নাড়িভুঁড়ির মাধ্যমে মাছেও যাবে। তবে সাধারণ দৃষ্টিতে নাড়িভুঁড়িতে কোনো সমস্যা দেখছি না।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *