বিএনপির ধানের শীষ নিয়েই ভোটে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক:
অবশেষে প্রতীক ঠিক করেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কয়েক দফা বৈঠকের পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। রাজধানীর মতিঝিলে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে জোটের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ কথা জানান।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন। এ সময় জোটের অন্যান্য শরিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোটবদ্ধভাবে ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে অংশ নেবে। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি দল (আওয়ামী লীগ) নির্বাচন না পেছাতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) হুমকি দিচ্ছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন-তার চিন্তা সরকারি দলের না করলেও চলবে, বলে মন্তব্য করেন মান্না।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এ নেতা বলেন, গত বুধবার বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ বাহিনীর নির্মম হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। একদিকে সরকার পক্ষ চারদিন ধরে সমস্ত রাস্তাঘাট বন্ধ করে একটি উৎসব করলো, সেই উৎসবের ফসলে দুজন মারা পর্যন্ত গেলো। তখন পুলিশ কোনো কিছু-ই করেনি। অথচ এদিকে দেখা গেলো, বিএনপির মনোনয়নপত্র বিতরণ উপলক্ষে যখন নেতাকর্মীরা জমা হয়েছে তার একদিন আগে নির্বাচন কমিশন সড়ক পরিষ্কার রাখতে বিবৃতি দিলেন এবং তার পরদিনই এই হামলা হলো। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত ছিলো।

নাগরিক্য ঐক্যের নেতা মান্না আরও বলেন, আমাদের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে, এই হামলার পর পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য সরকারি দলের হাত আছে। অসমর্থিত কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য খবরে জানা গেছে, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীরা হেলমেট পড়ে, (যে হেলমেট বাহিনী আমরা কোটা আন্দোলনোর সময় দেখেছিলাম) সেই বাহিনী নয়াপল্টনে তৎপর ছিল। আমরা এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছি ও নিন্দা জানাই। আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি- সরকার চেষ্টা করছে, বিরোধীদল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেই উসকানি দিচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ করবো। আমাদের সিদ্ধান্ত সব রকমের বাধা উপেক্ষা করে নির্বাচন করবো। সেই নির্বাচনে একটা ভোট বিপ্লব হবে এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়েছে কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে জোটগতভাবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়টি অবহিত করতে বিকেলে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি প্রতিনিধিদল। এর আগে বিএনপির পক্ষ থেকে এক চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়, ২০ দলীয় জোটের নিবন্ধিত ৮টি দল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নেবে। বিএনপিসহ কয়েকটি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ছিল তাদের ওই সাত দফার মধ্যে। এসব দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফা সংলাপে বসেছিলেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সেখানে কোনো সমঝোতা না হলেও তারা ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচন পোছানোর জন্য গত বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করে ঐক্যফ্রন্ট। ওই বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের মূল নেতা কামাল হোসেন আশ্বস্ত হওয়ার কথা বললেও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির সংশয় কাটেনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *