বাঘায় মানববন্ধনে দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়,অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ

রাজশাহী লীড

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহীর বাঘায় সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্তি টাকা আদায়,অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদসহ সরকারি ফি এর মাধ্যমে জমি রেজিষ্টির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে । বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারনের ব্যানারে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

জানা যায়, বছরের পর বছর দলিল লেখক সমিতির নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। এতে জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্থ হলেও লাভবান হন, যারা সমিতির নামে সভাপতি-সম্পাদকের চেয়ারে বসেন। অনেকেই নিজের ভাগ্যের পরিবর্ততন ঘটিয়েছেন। জনগনের ভোগান্তি কমাতে জনপ্রতিনিধি হিসেবে যাদের দেখ ভালের দায়িত্ব তারা না দেখে বরং নিজের পছন্দের লোককে নামমাত্র সমিতির সভাপতি-সম্পাদক বানিয়ে অবৈধ অর্থ উপার্জনে সহায়তা করেছেন। অনেক দলিল লেখক, কোন কাজ না করেই ভাগ নেন। সরকারি নিয়মেই দলিল সম্পাদন করতে চান। মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফির সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সহমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড.লায়েব উদ্দীন লাভলু, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাছ আলী, উপজেলার পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ, কমিউনিষ্ট পার্টির নেতা বাবু প্রশান্ত পান্ডে।

দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম স্বপন বলেন, সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হলেও দলিল লেখকরাও তাদের হিসাব বুঝে পাননা। দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কলিম উদ্দীন বলেন, সমিতির নামে যেখানে অকল্যাণ হয়,আমরা এমন সমিতি চাইনি।

স্থানীয় সংসদ সদস্যর নাম জড়িয়ে মেরাজুল ইসলাম মেরাজ বলেন, মুঠোফোনের এসএমএসের মাধ্যমে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সম্পাদক নির্ধারণ করা হয়। সাধারন জনগনের ভোগান্তির কথা না ভেবে, ভাবেন তার অনুসারি নেতাদের কথা। যারা দায়িত্ব পান,তারা লক্ষ লক্ষ টাকা কামাই করে নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছেন। অনিবন্ধিত সমিতির নামে সকল অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করে সরকার নির্ধারিত ফি দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রির কাজ করে জনগণের ন্যায্য অধিকার বুঝে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

আক্কাছ আলী বলেন, সিন্ডিকেট করে দলিল লেখক সমিতির নামে টাকা আদায় করা হয়। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বছরের পর বছর ধরে সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করাতে হয়। মানুষকে জিম্মি করে আদায় করা টাকার অংশ পান সাব রেজিষ্টারসহ কতিপয় নেতারাও। এক্ষেত্রে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর রাজনৈতিক এপিএসের নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

আক্কাছ আলী বলেন, বর্তমান দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টুর, দেওয়া বক্তব্যে নিজেই বলেছেন, কে তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সরকার যখন জনগনের কল্যাণে কাজ করতে অঙ্গিকার বদ্ধ,তখন নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যও দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির নামে জনগনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তিনি জনগনের ভোগান্তির কথা ভাবছেননা। প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন বলেন, আমরা সাধারন জনসাধারনকে নিয়ে জনকল্যাণে দুর্নীতিমুক্ত বাঘা উপজেলা গড়তে চাই।

অ্যাড. লায়েব উদ্দীন লাভলু বলেন, দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দূর্নীতি বন্ধ করে, জনস্বার্থে রেজিষ্ট্রি অফিসের সামনে জমি রেজিষ্ট্রির সরকারি ফি এর তালিকা ঝুলিয়ে দেওয়া হোক। তিনি বলেন, চার লক্ষ টাকা দিয়ে যে জমি কেনা হয়েছে,সেই জমি রেজিষ্ট্রিতে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে এমনও নজির আছে। । এসব বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহি অফিসার,সাব রেজিষ্ট্রারসহ সরকারের দায়িত্বশীল কর্তা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছি। তারা যেন সরকারের ভাব মূর্তি রক্ষায় জনগনের ন্যায্য দাবি বিবেচনা করে পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তা না হলে বাঘার সর্বস্তরের জনতা এককাতারে যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন।

দায়িত্ব পাওয়া বর্তমান দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহামান পিন্টু বলেন, গুটি কয়েক দলিল লেখক পদ পদবির জন্য এমনটা করছে। বর্তমানে ১৬৫ জন দলিল লেখক রয়েছে। মাসে ৩০/৪০ টি দলিল হয়। যা দিয়ে একজন দলিল লেখকের চলেনা। অধিকাংশ দলিল লেখক তার সাথে রয়েছে। সভাপতি হিসেবে সকলের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করে কাজ করবেন।

উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার এএন নকিবুল আলম বলেন, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। সমিতির বৈধতা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়টি দলিল লেখকরাই ভালো জানেন। সমিতির মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে দলিল সম্পাদনের কথাও অস্বিকার করেন তিনি।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *