স্বদেশ বাণী ডেস্ক : যুগ যুগ ধরে উপমহাদেশে পুরুষের থেকে পিছিয়ে নারী, এই তিক্ত সত্য সবার বোধগম্য কিন্তু কেন পিছিয়ে? বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা, চাকরি কোনো কিছুতেই যখন নারীর অবদান কম নয়, তখনও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষ কেন নারীকে কেবল কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিতেই আবদ্ধ করে রেখেছে?
বলা হয় সিনেমা হলো সমাজের প্রতিচ্ছবি। তবে কেও কেও এও বলেন, কেবল সমাজের গল্প নিয়েই সিনেমা হয় না , সিনেমার গল্প দেখেও সমাজ তৈরি হয়। অর্থাৎ সিনেমা শিল্পের উপরও সামাজিক গোঁড়ামি ভাঙার দায়িত্ব বর্তায়। নারী উন্নয়নে এদিক দিয়ে কতটা অবদান রাখতে পেরেছে সিনেমা বাণিজ্যের অন্যতম অঙ্গন বলিউড, সেদিকেই নজর দেয়া যাক।
বলিউডের বহু সিনেমায় পতিতাবৃত্তিকে যতটা গ্লোরিফাইড করে দেখানো হয়েছে বারবার, সেখানে যৌন নিপীড়ন, কিডন্যাপিং, শিশু নির্যাতন কিংবা নারী পাচারের গল্প উঠে আসেনি পর্যাপ্ত। বরং বলিউডের চিত্রায়নে পতিতারা হলেন চটকদার, ধনী, প্রতিভাবান, রাণী-সদৃশ মনোমুগ্ধকর মহিলা যারা শুধুমাত্র বিলাসবহুল প্রাসাদতুল্য বাড়িতে থাকেন এবং গান এবং শাস্ত্রীয় নৃত্যের মতো শিল্পের প্রদর্শন করেন। যেখানে তাদের সমাদরও হয় প্রচুর। উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে, ‘দেবদাস’, ‘কলঙ্ক’, ‘গাঙ্গুবাই’র মত সিনেমাগুলোকে। বাস্তব বর্জিত এইসব সিনেমায় সত্যিকার পতিতাদের গল্প কতটা উঠে আসে?
অঞ্চল বা রাজ্য নির্বিশেষে, প্রায় সমগ্র বিনোদন শিল্পে নারীদের চিত্রায়ন করা হয় কেবল যৌন আকাঙ্ক্ষার বস্তু হিসেবে। এই আধুনিক যুগে এসে নারীদের সম্পর্কে গল্প লিখতে বিকশিত হতে পারেনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। ধরা যাক, দক্ষিণী সুপারস্টার আল্লু অর্জুনের ২০১৯ সালের সুপারহিট সিনেমা ‘আলা বৈকুণ্থাপুরামুলো’কে। সিনেমার কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র একজন সফল উদ্যোক্তা কিন্তু তারপরও জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তাকে ‘বাঁচাতে’ আসবেন একজন নায়ক। প্রতিকূল ব্যবসায়িক চুক্তি থেকে, জোরপূর্বক বিবাহ থেকে তাকে ‘মুক্তি’র জন্য প্রয়োজন কেবল একজন নায়কের। যেকোনো সুপারস্টারের যেকোনো ভাষার সিনেমাই বাছাই করুন, সবচেয়ে সাধারণ বার্তাটি হলো যে মহিলারা শুধুমাত্র শিকার হতে পারে। প্রতিবাদ করার ক্ষমতা তাদের নেই।
পিছিয়ে নেই ভারতীয় টিভি সিরিয়াল। যার দর্শক সংখ্যা কয়েক কোটি। দুঃখজনকভাবে, এসব সিরিয়ালের নির্মাতাদের মধ্যে কিছু গোঁড়া প্রবণতা রয়েছে। প্রায় প্রতিটি নাটকেই একজন আদর্শ নারী হিসেবে চিত্রায়িত হয় নিরক্ষর, সাধাসিধা কম কথা বলা, সুদর্শন নারী যিনি শ্বশুরবাড়ির সব অপমান, গালাগালি, সহিংসতা মুখ বুজে সহ্য করে চলে। কিংবা কালো মেয়ের ফর্সা কোনো স্বামী, যিনি দিনরাত কথা শোনাতে শোনাতে একসময় প্রেমে পড়েন বউয়ের। একজন নারীর সার্থকতা কেবল তার স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির সন্তুষ্টি অর্জনে, এমনটায় দেখানো হয় স্টেরিওটিপিক্যাল এসব সিরিয়ালে।
কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। ‘দিল্লি ক্রাইম’র ডিসিপি-র শেফালি শাহের চরিত্রে যেমন কোনো জবড়জং পোশাক বা মেকআপ দেখানো হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি শটে তাকে গ্ল্যামারাস দেখানো হয়নি। সর্বোপরি তাকে এখানে একজন সত্যিকার ডিসিপি হিসেবেই দেখানো হয়েছে, একজন ‘নারী ডিসিপি’ হিসেবে নয়। আরও কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে, তবে এই ঘটনাগুলি বিরল। অনিবার্য কিছু কারণে, আমরা, একটি সমাজ হিসাবে, দর্শক হিসাবে এবং এমনকি ভোক্তা হিসাবে, মিথ্যা আদর্শবাদীতা এবং বিষাক্ত গতানুগতিকতা থেকে নারীদের অবমুক্ত করতে পারিনি।
স্ব.বা/ম