সব ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, তাতে কী খাওয়া ছেড়ে দেওয়া হয়েছে?

জাতীয়

স্বদেশবাণী ডেস্ক: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, যে কোনো কাজ করতে গেলে কিছু সমালোচক থাকেই। ভ্যাকসিনের বিষয়ে বিরূপ প্রচার-প্রচারণা আছে। প্রতিটি ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই বলে কি ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। ভ্যাকসিনের ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না এ কথা আমি বলব না।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার পর জ্বর হতে পারে, এটা স্বাভাবিক। মাথা ব্যথা হতে পারে, জায়গা একটু ফুলে যেতে পারে। এখন পর্যন্ত যত জনকে ভ্যাকসিন দিয়েছি সবাই ভালো আছেন। যারা যারা এ ভ্যাকসিন দিচ্ছে যেমন ইউরোপে, ভারতে সব জায়গাই আমরা খোঁজখবর নিয়েছি তারা সবাই ভালো আছে।

শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে বিশেষ অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিশ্বের ২৩ নাম্বার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছে। ঘরে বসে শুধু সমালোচনা করা যায়, বাস্তবতা অনেক কঠিন। ভ্যাকসিন নিলে কোনো ভয় নেই বরং ভ্যাকসিন না নিলেই ভয়। ভ্যাকসিন এখন একটি বড় অস্ত্র এই করোনার জন্য।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে প্রশংসা পাবে, পাচ্ছেও অলরেডি। অনেক রাষ্ট্র এখনো ভ্যাকসিন পায় নাই, আগামী দুই-তিন মাসেও পাবে কি না- সন্দেহ আছে! তার উদাহরণ থাইল্যান্ড ভ্যাকসিন এখনো ব্যবস্থা করতে পারেনি, মালয়েশিয়া পারেনি, সিঙ্গাপুর পারেনি, শ্রীলংকা পারেনি, বড় বড় রাষ্ট্ররা পারেনি।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন দেওয়ার একটি পদ্ধতি অনসুরণ করা হবে। ফ্রন্টলাইনদের (সম্মুখসারি) আগে এ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তারপরে পর্যায়ক্রমে যারা বয়সে সিনিয়র তাদের দেওয়া হবে। কোভিড আমরা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছি, ভ্যাকসিন দেওয়াতেও আমরা সফলতার সঙ্গে দিতে পারব, করতে পারব।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভ্যাকসিন এমনি এমনি আসেনি। গত ৬ মাস যাবত এই ভ্যাকসিন আনার জন্য লেগে থাকতে হয়েছে। যে দেশগুলো ভ্যাকসিন তৈরি করছে সবার কাছে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। সবার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অন্যতম সেরা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক। পৃথিবীর ৬০ ভাগ ভ্যাকসিন এই ইনস্টিটিউটে তৈরি হয়। সেখান থেকে আমরা এ ভ্যাকসিনটি আনার ব্যবস্থা করেছি। অনেক দেন-দরবার হয়েছে এ নিয়ে। ভ্যাকসিন আসার আগ মুহূর্তে সব দেশের চাপ পড়েছে। আমরা আগে আগে বুকিং দিয়েছি, আগে আগে টাকা পাঠিয়েছি, নেগুসিয়েশন (সমঝোতা) করেছি, অন্যেরা এখন চাপ সৃষ্টি করছে। আমরা ৩ কোটি ভ্যাকসিনের টাকা অলরেডি দিয়ে দিয়েছি। ২০ লাখ ভ্যাকসিন ভারত সরকার বাংলাদেশের মানুষকে উপহার হিসেবে দিয়েছে। আমাদের কাছে এই মুহূর্তে ৭০ লাখ ভ্যাকসিন আছে। ডব্লিউএইচওতে আমাদের সাড়ে ৬ কোটি ভ্যাকসিনের অর্ডার দেওয়া আছে। যখন পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন থাকবে তখন তারা আমাদের সরবরাহ করবে।

জাহিদ মালেক আরও বলেন, সরকারের গাইডলাইন (নীতিমালা) অনুযায়ী সারা দেশে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। করোনাভাইরাস যেভাবে সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করা হয়েছে, ভ্যাকসিনও সফলতার সঙ্গে দিতে পারব। যে কোনো কাজ করতে গেলে কতিপয় সমালোচক থাকে। ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা নিয়ে বিরূপ প্রচার-প্রচারণা আছে। প্রতিটি ভ্যাকসিনেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। একটু জ্বর হতে পারে, শরীর গরম বা মাথা ব্যথা হতে পারে। প্রতিটি ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, তাতে কি ওষুধ সেবন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে? সুস্থ জীবনের নিরাপত্তার ও সুরক্ষার জন্য প্রত্যেককে ভ্যাকসিন নিতে হবে।

অবহিতকরণ সভায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম ফেরদৌসের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আক্তারুজ্জামান, পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম. সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী, ডায়াবেটিস সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নীনা রহমান, সাধারণ সম্পাদক লক্ষী চ্যার্টাজি, প্রেস ক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, সাধারণ সম্পাদক অতীন্দ্র চক্রবর্তী বিপ্লব প্রমুখ।

পরে মন্ত্রী সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সংরক্ষিত মানিকগঞ্জের জন্য আনা ৪৮ হাজার ভ্যাকসিন পরিদর্শন করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *