মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিক বিক্ষোভ, পুলিশের গুলি

জাতীয়

স্বদেশবাণী ডেস্ক: তিন মাসের বকেয়া বেতনভাতার দাবিতে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুরে ওপেক্স গ্রুপের সিনহা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও কাভার্ডভ্যান রেখে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে যান চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উভয় প্রান্তে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, খবর পেয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশ ও কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের পৃথক দুটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রায় ৩০ রাউন্ড গুলি ও ৪০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

এর আগে গত বুধবার বিকালে একই দাবিতে কাঁচপুর এলাকায় সিনহা গার্মেন্টসের শ্রমিকরা টায়ার জ্বালিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। রাত সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিতে গেলে শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এ সময় পুলিশ প্রায় ৬০ রাউন্ড গুলি ও ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে সোনারগাঁও থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান, শিল্পাঞ্চল পুলিশের কনস্টেবল সজিবসহ (ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ) পাঁচ পুলিশ সদস্য, আট শ্রমিক ও পথচারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাঁচপুর শিল্পনগরী এলাকায় অবস্থিত পোশাক রপ্তানিকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওপেক্স গ্রুপের সিনহা গার্মেন্টসে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।  বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা দ্বিতীয় দফা তাদের বকেয়া বেতনভাতার দাবিতে কারখানা এলাকায় অবস্থান নেন। পরে বিক্ষুব্ধ  শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে ও কাভার্ডভ্যান রেখে অবরোধ করে রাখেন।

এ সময় দুটি মহাসড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে শিল্পাঞ্চল পুলিশের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও সোনারগাঁও থানা পুলিশের পৃথক দুটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রায় ৩০ রাউন্ড গুলি ও ৪০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। শ্রমিকরা এ সময় মহাসড়ক থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

সিনহা গার্মেন্টসের শ্রমিক রায়হান, আমীর ও নোমান জানান, লকডাউন শুরুর আগে থেকেই শ্রমিকদের বেতনভাতা বকেয়া ছিল। গত বুধবার সকালে মালিকপক্ষ তিন মাসের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

মালিকপক্ষ বেতনভাতা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করেন। অবরোধ তুলে নিতে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করলে শ্রমিকরা তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেন। একই দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে আবারও শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ শ্রমিকদের লক্ষ্য করে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

সোনারগাঁও থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা বিক্ষিপ্তভাবে আবারও মহাসড়কে নেমে অবরোধের চেষ্টা করেন। আমরা তাদের সরানোর চেষ্টা করলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্পাঞ্চল পুলিশ এ সময় ৩০ রাউন্ড গুলি ও ৪০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।

বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, সিনহা গার্মেন্টস মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আগামী বুধবার শ্রমিকদের বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ করবে বলে সময় বেঁধে দিয়েছেন। শ্রমিকরা সেটি না মেনে মহাসড়কে বারবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা, পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ও হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে সোনারগাঁও থানায় একাধিক মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *