মাত্র ৫ হাজার টাকার পিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক

জাতীয়

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: যুবলীগের প্রধান কার্যালয়ের এক সময়কার পিয়ন এখন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক। মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে যুবলীগের অফিস দেখাশোনার চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া এই ব্যক্তি এখন সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ পদে। সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতাদের ব্যবহার করে সামান্য বেতনের কর্মচারী থেকে বনে গেছেন কোটিপতি। দুর্নীতি-মাদকবিরোধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানে নজরদারিতে রয়েছেন তিনি। যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার হতে পারেন।

পিয়ন থেকে যুবলীগের দফতর সম্পাদক হওয়া ওই নেতার নাম কাজী আনিসুর রহমান। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে যোগ দেন ২০০৫ সালে। বেতন ছিল মাসে ৫ হাজার টাকা। সাত বছর পর বনে যান কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক। যুবলীগের সবশেষ কমিটিতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

তিনি এখন একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক। সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর আনুকূল্যে রাতারাতি জীবনধারা বদলে গেছে তার। কোটিপতি আনিস এখন ওমর ফারুক ছাড়া কাউকে পরোয়া করেন না।

২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যখন আনিসের চাকরি হয়, তখন তিনি নেতাদের হুট ফরমায়েশ শোনার পাশাপাশি কম্পিউটার অপারেটরের কাজও করতেন। এই সুবাদে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি কার্যালয়ে আসা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও সখ্য হয় তার। সময়ের ব্যবধানে প্রযুক্তিকে পিছিয়ে থাকা নেতাদের নজরেও চলে আসেন আনিস।

কেন্দ্রীয় যুবলীগ সারা দেশে যেসব কমিটি দিত, সেগুলো কম্পিউটারে টাইপ করে দিতেন আনিস। টাইপ করতে গিয়ে কোন জেলায় কে সভাপতি কে সম্পাদক তা নখদর্পণে চলে আসে আনিসের। মুখস্থ বলে দিতে পারতেন যেকোনো কমিটির নেতার নাম। এসব কারণেই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। আবার জেলাপর্যায়ের নেতারাও কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রের তথ্য বা সিদ্ধান্ত জানতে তাকে ফোন করতেন। এভাবে জেলা নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্য হয়ে যায়।

২০১২ সালে যুবলীগের কমিটি হলে আনিস পেয়ে যান উপদফতর সম্পাদকের পদ। শীর্ষ নেতার আশীর্বাদ থাকায় ছয় মাস পর খালি থাকা দফতর সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেয়ে যান আনিস।

কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনিসকে সবাই ‘ক্যাশিয়ার’ বলেই চেনে। তবে গত এক যুগে তিনি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিছু যুবলীগ নেতার সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গী এই আনিস।

ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর সড়কে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে আনিসের। তবে ওই ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন না। বর্তমানে রাজধানীর ধানমণ্ডির ১০/এ সড়কের একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে থাকেন কাজী আনিস। ওই ফ্ল্যাটটিও তার নিজের।

শুধু তাই নয়, গোপালগঞ্জে আনিসের রয়েছে বিপুল স্থাবর সম্পত্তি। আগে পাঁচ-ছয় বিঘা জমি ছিল তাদের। গত চার বছরে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। বাড়ি করেছেন, পেট্রলপাম্প এবং তার পাশের জমি কিনেছেন। এর মধ্যে পেট্রলপাম্পটি কিনতে কোটি টাকা লেগেছে আনিসের। পাশেই ৫ একর জমি আছে তার কেনা। এ ছাড়া ঢাকায় আনিসের তিনটি বাড়ি আছে।

কাজী আনিসের জন্ম গোপালগঞ্জ। মুকসুদপুর উপজেলার ভাবড়াসুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের ফায়েকুজ্জামান (ফায়েক কাজী) কাজীর ছেলে কাজী আনিসুর রহমান। ২০০১ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে পোশাক তৈরির কারখানায় চাকরি নেন। এর পর ২০০৫ সালে এলাকার এক নেতার মাধ্যমে চাকরি নেন যুবলীগের কার্যালয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন ও যুবলীগের বিভিন্ন কমিটিতে পদবাণিজ্য করেই বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন কাজী আনিস। যুবলীগ নেতারা জানান, আনিসের দাপটে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে টেকা দায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা অভিযোগ করেন, আনিসের বিরুদ্ধে কথা বলে টেকা কঠিন। বিভিন্ন ইউনিটে বছরের পর বছর সম্মেলন না করে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চালানো হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে এসব আহ্বায়ক কমিটি বানানো ও দীর্ঘদিন বহাল থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন আনিস। আনিসের দাপটে পুরনো অনেক নেতা যুবলীগে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন।

নেতাকর্মীরা জানান, জিকে শামীম, খালেদসহ কয়েকজনের সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়েন আনিস। তার সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ক্লাবে জুয়ার আসর চালানোসহ সব অপকর্মে জড়িত। যুবলীগে আনিসুর ‘ক্যাশিয়ার’ নামেই পরিচিত। চাঁদার টাকা সংগ্রহ এবং বিভিন্ন মহলে পৌঁছানোর কাজ করেন তিনি। এক শীর্ষ নেতা ছাড়া সবাই তাকে সমীহ করেন। আনিসুরের কারণে ত্যাগী ও সৎ যুবলীগ নেতারা শীর্ষ নেতাদের কাছেও ভিড়তে পারেন না। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *