রাজশাহী সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোতে সবাইকে সতর্ক থাকতে মাইকিং

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। কেউ যেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্য রেখার আশপাশে না যান, সে জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে। এ নিয়ে সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে। মাইকিংয়ের সময় জেলে এবং কৃষকদের এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় ভারতীয় এক জেলেকে আটকের জের ধরে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) শূন্য রেখা অতিক্রম করে এসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের ওপর গুলি চালায়। আত্মরক্ষায় বিজিবির পক্ষ থেকেও গুলি চালানো হয়। এতে নিজেদের এক সদস্য নিহত এবং একজন আহত হওয়ার দাবি করেছে বিএসএফ। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে শুক্রবার রাজশাহীর সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোতে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমরা যেমন ছিলাম তেমনই আছি। তবে যেসব উপজেলায় ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে সেসব উপজেলা প্রশাসনকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তারা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করেছে।

চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল হক বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তারা এলাকায় মাইকিং করে দিয়েছেন। এই মাইকিংয়ের ফলে সীমান্ত এলাকার লোকজন কিছুটা আতঙ্কিত রয়েছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

তবে সীমান্তে কোনো উত্তেজনা নেই উল্লেখ করে বিজিবির কর্মকর্তা ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য আমাদেরও খারাপ লাগছে। সব সময় আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পাশাপাশি কাজ করি। আর এ জন্যই সীমান্তে কোনো উত্তেজনা নেই। বিজিবি-বিএসএফ এখনও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছে। লোকজনের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

এদিকে চারঘাটের পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকারে এসে আটক হওয়া ভারতীয় জেলে প্রণব মণ্ডলকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার সকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় চারঘাট থানা পুলিশ। এর আগে রাতে বিজিবির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার কুণ্ডু জানান, বিজিবির চারঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির হাবিলদার হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে প্রণব মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বেআইনিভাবে মাছ শিকারের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রণবের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার ছিড়াচর গ্রামে। তার বাবার নাম বসন্ত মণ্ডল।

প্রণবকে আটককে কেন্দ্র করে বিজিবি-বিএসএফ গোলাগুলির পর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। পরে রাতে বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার পদ্মা নদীতে অভিযানে যায় বিজিবি। এ সময় মাছ ধরার সময় তিনজন জেলেকে আটকের চেষ্টা করা হলে দুইজন পালিয়ে যান। তবে প্রণবকে জালসহ আটক করে নদীর এপারে নিয়ে আসা হয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পীড বোট নিয়ে অনুমতি ছাড়া শূন্য লাইন অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ৬০০ থেকে ৬৫০ গজ ভেতরে নদীর এপারে বিজিবি টহল দলের কাছে আসে এবং আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলে। বিজিবি টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিককে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে তাদের জানায়।

কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা ভারতীয় নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে নিয়ে মারধর করেন। তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে আনুমানিক ৬ থেকে ৮ রাউন্ড ফায়ার করে। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবির টহল দল ফাঁকা ফায়ার করে। তখন বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।

ইতিমধ্যে বিএসএফের বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দুটি ছবি প্রকাশ হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, স্পিডবোটে চড়ে নদীর এপারে বাংলাদেশে ঢোকেন বিএসএফের কয়েকজন সদস্য। তারা স্পিডবোট থেকে নামছে। তাদের পরনে বিএসএফেরই পোশাক ছিলো। বিএসএফ সদস্যদের পাশে চারঘাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আরিফুল ইসলামই বিজিবি সদস্যদের নিয়ে পদ্মায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে গিয়েছিলেন।

এদিকে সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্খিত’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমেই এর সুরাহা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেখুন, একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে একটি চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। হঠাৎ করে এই ঘটনা ঘটায় আমরা সবাই মর্মাহত হয়েছি।

জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পদ্মায় ভারতীয় জেলেদের ইলিশ ধরা নিয়ে একটি জটিলতা হচ্ছিল। এ নিয়ে বিএসএফ সদস্যরা এসেছিল। কিন্তু তারা পতাকা বৈঠকের অপেক্ষা না করে চলে যাওয়ার সময় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *